চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

­১ ঘণ্টায় একসঙ্গে ১০০ পশু জবাই করা যাবে। অপেক্ষায় রাখা যাবে ৩০০ পশু

নগরে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের জটিলতা কাটলো

নওশের আলী খান

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

নগরীতে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হয়েছে। সাগরিকা গরু বাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৫২ গণ্ডা (৪৫ হাজার বর্গফুট) জমির উপর এই কসাইখানা নির্মিত হবে। অতিসত্বর এটির কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

গত ২৯ জানুয়ারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নগরীতে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের সাগরিকা গরুর বাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শন করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট মো. ইসতিয়াক সোবহান। সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. এ. কে এম হুমায়ুন কবির। এ সময় বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি প্রস্তাবিত জায়গা ঘুরে দেখেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করার আশা ব্যক্ত করেন। প্রকল্পের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. আবু সৈয়দ (সাঈদ) দৈনিক পূর্বকোণকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যাংকের ৮৩ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এটি। ব্যবস্থাপনায় থাকবে সিটি কর্পোরেশন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে পাস হওয়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শতভাগ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কসাইখানাটি নির্মাণ করা হবে। পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকায় চসিকের ৮৮ শতক জায়গার উপর এই কসাইথানা নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্থান নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু জায়গাটি নগরীর একপ্রান্ত হওয়ায় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের পছন্দ হয়নি। ফলে ৪ বছরের অধিক সময় ধরে প্রকল্পটি ঝুলে থাকে। একপর্যায়ে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যাওয়ারও কথা ঊঠে। তখন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ যিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা তিনি সিটি মেয়র রেজাঊল করিম চৌধুরীর সাথে ব্যক্তিগতভবে সাক্ষাত করে বিষয়টি তুলে ধরার পর সিটি মেয়র সাগরিকা গরু বাজার এলাকায় জমি দেয়ার জন্য সম্মত হন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নগরীতে পশু জবাইয়ের জন্য কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি কসাইখানা রয়েছে। রৌফাবাদ, ফিরিঙ্গিবাজার ও পাহাড়তলীতে রয়েছে এ তিন কসাইখানা। গুটিকয়েক মাংস বিক্রেতা ছাড়া সাধারণ লোকজন এসব কসাইখানায় তাদের পশু জবাই করেন না। সাধারণ লোকজন বিয়ে-মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠানে যেসব পশু জবাই করেন, তা তাদের বাসা-বাড়ির সামনে বা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় জবাই করে থাকেন। প্রায়য় প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও এভাবেই নির্ধারিত স্থানের বাইরে পশু জবাই করা হচ্ছে। অথচ আইনে রয়েছে পশু জবাইয়ের আগে একজন পশু চিকিৎসক পশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং কেবলমাত্র নিরাপদ ঘোষণা হলেই পদ্ধতিগতভাবে তা জবাই হবে। কিন্তু নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না থাকায় অনিরাপদ মাংসই খাচ্ছেন নগরবাসী। এতে চরম ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য।

কসাইখানায় যা থাকবে: এ কসাইখানায় থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবন ছাড়াও থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসোলেশন, স্মার্ট স্টকিং স্পেস সুবিধা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ব্লাড (রক্ত ব্যবস্থাপনা) ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শৃঙ্খলা। যেখানে ১ ঘণ্টায় একসঙ্গে ১০০ পশু জবাই করা সম্ভব হবে। অপেক্ষায় রাখা যাবে ৩০০ পশু। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্থাৎ হালালভাবে পশু জবাই, জবাইকৃত পশুর মাংস ফ্রিজিং করার সুব্যবস্থা, পশুর রক্তকে পোল্ট্রি ফিডে রূপান্তর করা এবং অন্যান্য বর্জ্য শতভাগ রিসাইক্লিং ও ইটিপি করা হবে। আশপাশের পরিবেশের উপর কোন ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ার শংকা থাকবে না। পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি, শিংসহ যেগুলো ফেলে দেওয়া হয়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী মানসম্পন্ন ও হালাল মাংস পাবে, পরিবেশ স্মার্ট থাকবে এবং ক্ষুরারোগসহ গবাদিপশুর নানা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কসাইখানাটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর সেটি নিজে বা ইজারা দিয়ে পরিচালনা করবে চসিক।

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট