চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনের অগ্রগতি জানতে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে সুজন

অনলাইন ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৩৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলীর সাথে তার দপ্তরে মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। রবিবার (২৯ জানুয়ারি ) সকালে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করেন তিনি।

 

মতবিনিময়ে সুজন বলেন, প্রতিবছর বর্ষা এলেই বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীতে পরিণত হতো চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের জনগনকে তাই জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেন, যা চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। মূলত চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড-কে। এরপর থেকেই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করে। এর মধ্যে অনেকগুলো খালের অস্তিত্ব অনেকাংশে বিলীন হয়ে গেছে। যেসব খাল দিয়ে ভারি বা স্বল্প বর্ষণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

 

এছাড়া নগরীর অনেকগুলো খাল ছিল বিভিন্ন দখলদারদের দখলে, নালা এবং ড্রেনগুলোও দখলে দূষণে প্রায় সংকুচিত ছিল। বিভিন্ন খাল দখল করে গড়ে উঠেছিল আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন। কয়েকটি খাল তো নগরীর মানচিত্র থেকেই মুছে গিয়েছিল। এসব খাল, নালা দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করাটা অনেকখানি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপরও দক্ষতার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এমনকি করোনাকালীন সময়েও কাজ চলমান রাখাটা বেশ প্রশংসনীয়। দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনের চলমান কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গেলেও নগরীর বেশকিছু এলাকা এখনো অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। নগরবাসীর মূল্যবান জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ফলত ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। আর এ দুর্ভোগ থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই খালের ভিতর থেকে সকল মাটি ও আবর্জনা অপসারন এবং খালের মুখের প্রতিবন্ধকতা দূর করার অনুরোধ জানান তিনি। বিশেষত নগরীর স্পর্শকাতর মুরাদপুর, ২নং গেইট, বহদ্দারহাট, চকবাজার এবং চাকতাই এলাকার অবশিষ্ট কাজগুলো ত্বড়িৎ সম্পন্ন করতে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা কামনা করেন তিনি।

 

এছাড়া নগরীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাকতাই এবং খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীগণ জলাবদ্ধতা নিয়ে প্রায়শই উদ্বিগ্ন থাকেন। প্রতিবছর জলাবদ্ধতায় উল্লেখযোগ্য পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের। তাই আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই চাকতাই খালের মুখে স্থাপিত স্লুইসগেটটি চালু করারও আহবান সুজনের। তাছাড়া ফইল্যাতলী বাজার থেকে মহেশখালের মুখ পর্যন্ত কাজগুলো বর্ষা মৌসুমের আগে শেষ করতে পারলে নগরীর বিশাল একটি অংশ জলজট থেকে মুক্তি পাবে। তবে ইতোমধ্যে মহেশখালের দুপাশে রিটার্নিং ওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। তাই এসব কাজের পাশাপাশি মহেশখালের মুখের স্লুইসগেটের দ্বার উন্মোচন করা এবং মহেশখালের শাখা খাল তথা ঈশান মিস্ত্রী হাটের সম্মুখ অংশে আরেকটি স্লুইসগেট নির্মাণের কাজও শুরু করার আহবান জানান সুজন। এছাড়াও নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিজড়া খাল, মির্জা খাল ও রাজাখালী খালের কাজসমূহও শুস্ক মৌসুমের মধ্যে শেষ করতে প্রকল্প পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে চট্টগ্রামের জনগন জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

সুজন নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নগরবাসীকেও সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে গৃহস্থালি বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য খাল এবং নালায় না ফেলার অনুরোধ জানান। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী সুজনকে তাঁর দপ্তরে স্বাগত জানান। তিনি নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি জনসম্পৃক্ত কর্মকান্ডের প্রশংসার পাশাপাশি চসিক প্রশাসকের দায়িত্বকালীন সময়ে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য সুজনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পটি আমার চাকুরিকালীন সময়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। যেহেতু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থাকে সেহেতু এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমিও প্রথম দিন থেকেই সচেষ্ট ছিলাম। প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সাধারণ জনগণের ভালোবাসা ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে চট্টগ্রামে বর্তমানে যে কয়েকটি খাল চোখে দেখা যাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না করতেন তাহলে চট্টগ্রামের অবশিষ্ট খালগুলো অবশিষ্ট থাকতো কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।

 

বিদ্যমান খালগুলোর অবস্থা সরজমিনে দেখতে গিয়ে দেখা যায় একসময় যে খালগুলো দিয়ে নৌকা চলাচল করতো সে খালগুলো ক্রমান্বয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। অনেকগুলো খাল সীটে আছে কিন্তু বাস্তবে নেই। খাল দখল করে বিশাল অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে। তার উপর দখল, দুষণ এবং ভরাট তো নিত্যসঙ্গী। খালের ভিতর মাচা তৈরি করে সবজি চাষ, বাঁশ রেখে খালকে সম্পূর্ণ ভরাট করা ফেলা হয়েছে। এ খালগুলোকে পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে। বর্তমানে সকলের সহযোগিতায় খালগুলো অনেকটা দৃশ্যমান, খালের দুপাড়ে রিটার্নিং ওয়াল, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নগরীর যে সমস্ত খালগুলোতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেসব বাঁধ অপসারণ করে খালগুলো সম্পূর্ণ পানি চলাচলের উপযোগী করা হবে বলেও সুজনকে আশ্বস্ত করেন তিনি। পাশাপাশি যেসব খালে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও সহসা চালু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি নগরবাসীকে খাল ও নালায় ময়লা ফেলা থেকে বিরত থেকে নির্মিত ওয়াকওয়েতে যাতে নগরবাসী নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজসমূহ পরিপূর্ণ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরের জলজট অনেকটা নিরসন হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন প্রকল্প পরিচালক। মতবিনিময়ে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, স্বরূপ দত্ত রাজু প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট