চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩৭ বছরেও একজন ম্যাজিস্ট্রেট মেলেনি বিএসটিআইয়ে

রাজীব রাহুল

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস। যাত্রা শুরুর ৩৭ বছর পার হলেও এখনও নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট মেলেনি এই কার্যালয়ের। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য তাদের দ্বারস্থ হতে হয় জেলা প্রশাসনের। এছাড়া লোকবল সংকটে আশানুরূপ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায়ও বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরতদের। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে পণ্যের অনুমোদন না নিয়েই ব্যবসা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ঠকছেন ভোক্তারা। মানহীন পণ্যে ঝুঁকিতে পড়ছে মানবস্বাস্থ্যও। শুধু লোকবল সংকট নয়, যন্ত্রপাতি সংকটও প্রকট বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসে। এছাড়া অত্যাধুনিক ল্যাব না থাকায় আমদানিকৃত পণ্যের মান সনদ পেতে ব্যবসায়ীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে সরকার বিএসটিআই’র জন্য দশতলা একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প নিলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ ২০১৪ সালে এই ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পায় জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জিকে শামীম গ্রেপ্তার হলে চারতলার ঢালাই না দিয়েই মাঝপথে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবু তারেক পূর্বকোণকে বলেন, ২০১৪ সালের রেইট সিডিউলে জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি করার দায়িত্ব পেলেও তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে তার পার্টনাররা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরে (পিডব্লিউডি) তাদের কাজ স্যারেন্ডার করে। আইন অনুযায়ী পিডব্লিউডি পাওনা কর্তন করে বছর দেড়েক আগে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই থেমে থাকা কাজ শুরু হবে।

 

এই প্রকল্পের অধীনে কেনা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের প্রকল্প পরিচালক এই প্রকল্পের দু-তিন লট যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। ভবনে জায়গার অভাবে যেসব যন্ত্রপাতি চট্টগ্রামে সেটআপ করা যায়নি, সেগুলো মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকায় সেটআপ করা হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক (সিএম) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ১৯৮৫ সালে বিএসটিআই নামে চট্টগ্রাম অফিসের যাত্রা শুরু। এই ৩৭ বছরে অনেকবার ১জন ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদার কথা ঢাকা অফিসকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। অথচ অন্য ৫টি বিভাগীয় অফিসের মতো করে চট্টগ্রামকে ভাবা ঠিক না। কারণ এটা বাণিজ্যিক রাজধানী।

 

তিনি বলেন, ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। আমরা বিএসটিআই’র কর্মকর্তারা কোন প্রতিষ্ঠানে গেলে সীমাহীন অনিয়ম পেলেও প্রতিষ্ঠান সীলগালা করতে পারি না। আমরা শুধু মামলা করতে পারি। সেই মামলা আদালতে শুনানি হতে সময় লাগে। এর সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম আর থামে না। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে আমরা বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছি কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো শোধরায় না।

 

ঢাকায় পণ্যের মান পরীক্ষা নিয়ে মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমাদের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় চনাচুর, সরিষার তেল, ড্রিংকিং ওয়াটার, লোহার রড, সিমেন্ট, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, সফট ড্রিংকস, শিশুদের খাওয়ার গুঁড়ো দুধ ঢাকায় পাঠাতে হয় ।

 

জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসে এখন যে যন্ত্রপাতি ও লোকবল রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হয়। তাদের কার্যক্রম চোখেই তো পড়ে না। যখন জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় তখন বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন পণ্য ধরা পড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এতেই বোঝা যায় মাঠ পর্যায়ে তারা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে না।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট