চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চমেক ২০তম ব্যাচের মিলনমেলা

যেন স্বর্গ এসে ধরা দিলো মর্ত্যে

ডা. মো. সাজেদুল হাসান

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আড্ডা, নাচ, গান, কবিতা, অভিনয়, খেলাধুলা আর পানাহারের আসর কাল মগডালে চড়েছিলো। কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে গত শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০তম ব্যাচের দিনব্যাপী প্রাণের মেলা। ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি রোমন্থনে কত কথা হলো- হাসি, আনন্দ আর খুনসুটি নিয়ে। কঠিন অধ্যয়ন আর কঠোর অধ্যবসায়ের শৃঙ্খলে বাঁধা ছয় বছরের কত ঘটনা বারে বারে গল্প হয়ে নাড়িয়ে দিলো প্রতিটি হৃদয়। নানা ঘটনা, স্মৃতি, অব্যক্ত প্রেম ছুটে এসে বারে বারে মনে করিয়ে দিলো সেইসব জীবন্ত সময়। শত ব্যস্ততার মাঝেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এলেন নামিদামি সব চিকিৎসক। যদিও সবাই ষাট পেরিয়েছেন তবুও চিকিৎসকদের যেন কোনো অবসর নেই। কেউ এলেন অসুস্থ শরীর নিয়ে, কেউ এলেন পারিবারিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ফেলে। ভোরের কুয়াশা না কাটতেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী থেকে সারি বেঁধে গাড়ি রওনা হলো। লক্ষ্য একটাই কুমিল্লা ইস্টার্ন মেডিকেল পৌঁছা। যাদের দূরের পথ- কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, বগুড়া, যশোর, মাদারীপুর থেকে তারা আগের রাতে এসে ঠাঁই নিলেন। শত আয়োজনে কুমিল্লার বন্ধুরা সাজিয়ে তুলেছিলেন উৎসবের বিশাল মঞ্চ।
সারিবাঁধা জানা-অজানা ফুলের বাগান, শানবাঁধানো পুকুর, গাছ গাছালির ফাঁকে পাখির কূজন, রং-বেরং এর বেলুন ছড়ানো মনোরম পরিবেশে কোনো কিছুরই আর প্রয়োজন ছিলো না। তবুও কুমিল্লার বন্ধুরা সুগন্ধি গোলাপ দিয়ে আগত বন্ধুদের বরণ করে নিলেন। এরপর আপ্যায়নের পালা। সর্বোৎকৃষ্ট উপকরণে রসনা বিলাসের কোনো পদই তাঁরা বাকি রাখেননি। দেশি পাতিহাঁস, রূপচাঁদা মাছ, কুমিল্লার জগৎবিখ্যাত মিষ্টান্ন দই এর স্বাদ বহুদিন জিহ্বায় লেগে থাকবে। সব কিছু ছাপিয়ে ১০৭ বন্ধু আর প্রিয়দর্শন বন্ধুপতি/পতœী, শিশুদের কলকাকলীতে মুখরিত ইস্টার্ন মেডিকেলে কাল যেন স্বর্গ এসে ধরা দিলো মর্ত্য।ে প্রথম প্রজন্ম হতে দ্বিতীয় প্রজন্ম ছাডিয়ে অনেকের হাত ধরে তৃতীয় প্রজন্মও এসে তাদের পূর্বসূরীদের দেখে গেলো। ফাঁকে ফাঁকে প্রীতি ক্রিকেট, মিউজিক্যাল চেয়ার এবং ইস্টার্ন মেডিকেলের দেশি-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের মাতিয়ে দেওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মন ভোলানো নৃত্য, সুরের স্মৃতি নিয়ে ভাঙলো এই মিলন মেলা। যাঁদের হাত ধরে এই আয়োজন পূর্ণতা পেলো- ডা. কলিম, ডা. মান্নান, ডা. তোফায়েল, ডা. রেজা, ডা. মাহবুব, ডা. শফিকসহ সকল আয়োজক, পৃষ্ঠপোষক, সাহায্যকারী বন্ধু ও সাহসদাতা সঙ্গী এবং উপস্থিত অতিথি ও একঝাঁক ডানাকাটা পরীকে মিলনমেলার অনুষ্ঠান সফল করার জন্য অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। সবারই আফসোস আরো কিছুক্ষণ যদি মিলনমেলায় থাকা যেতো ভোর কিংবা মাঝরাত পর্যন্ত।
এই ব্যাচের ২০ জন বন্ধু ইতোমধ্যে পরলোক গমন করেছেন। বাকিরা অনেকে ঠিক সুস্থ নন, তবুও এখনো বেঁচে থেকে পৃথিবীর স্বাদ-গন্ধ নিতে পারছেন। সকল মৃতবন্ধুর পারলৌকিক শান্তি নিশ্চিত কামনা করে এবং সহসা অন্য কোথাও যেন আবার মিলিত হওয়া যায় এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সবাই কণ্ঠ মেলালো আবার জমবে মেলা বটতলা হাটতলা। সবশেষে কুমিল্লার বন্ধুদের এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের রমিজ, সেলিম, প্রদীপ, আলমগীর, নওশাদসহ সকল আয়োজককে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই সফল আয়োজনের জন্য আবারও বিন¤্র শ্রদ্ধা ও সালাম।
আগামীকালের কর্মমুখর দিনের কথা ভেবে সবার মন কি একটু খারাপ হলো?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট