চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে পাদুকা শিল্পে দুর্দিন

মিজানুর রহমান

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

জহির মিয়া চট্টগ্রামের মাদারবাড়িতে পাদুকা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেন ১৯৯২ সালে। চোরাই পথে আসা চীনা জুতার দাপটে ব্যবসায় মন্দা এলেও কারখানা চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর কারখানা বন্ধ করে দেন ভৈরবের এই ব্যবসায়ী। লকডাউনে বাড়ি গিয়ে ঘরের কাছেই গড়ে তুলেন কারখানা। শুধু জহির মিয়া নন। তার মতো কয়েকশ’ উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম ছেড়ে এখন ভৈরবে কারখানা গড়ে তুলেছেন।

 

 

জহির মিয়াদের মতো উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি কারিগরেরাও এখন ভৈরবমুখী। ফলে করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে চট্টগ্রামে ৭০০টি পাদুকা কারখানা থাকলেও তা এখন ৩০০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। আগে বছরে ২ লাখ জুতা তৈরি হলেও এখন মাত্র ১ লাখ জুতা তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামে পাদুকা ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভারও ৪০০-৫০০ কোটি থেকে ১০০-১৫০ কোটি টাকায় নেমে গেছে।

 

 

জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের পাদুকা শিল্প। উদ্যোক্তা-কারিগরেরা ভৈরবমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের নেতারা বলছেন- চট্টগ্রামে পাদুকা শিল্পের উদ্যোক্তা-কারিগরদের অন্তত ৬০-৭০% এর বাড়ি ভৈরবে। কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশের সবচেয়ে বড় পাদুকা প্রস্তুতকারক এলাকা গড়ে উঠেছে ভৈরবেই। ফলে চট্টগ্রামে কারখানা বন্ধ করে ঘরের কাছেই কারখানা করছেন উদ্যোক্তারা। কারিগরেরাও সেখানে কাজ নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে আর আসছেন না।

 

 

এছাড়া চীন-ভারত থেকে চোরাই পথে আসা জুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এবং মার্কেট থেকে বাকি টাকা উঠাতে না পেরেও অনেক উদ্যোক্তা চট্টগ্রামে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন বলে পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন- চট্টগ্রামে বেকার থাকা তরুণ-যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কারিগর হিসেবে তৈরি করা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ালে পাদুকা শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়াবে চট্টগ্রামে।

 

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুর খাঁন পূর্বকোণকে বলেন, করোনাকালে লকডাউন দেওয়ার পর চট্টগ্রামে থাকা ভৈরবের উদ্যোক্তা ও কারিগরেরা বাড়ি চলে যান। ঘরের কাছেই কারখানা গড়ে তুলেন। এতে ভৈরবের পাদুকা শিল্প বড় হয়েছে ঠিক- কিন্তু চট্টগ্রামের পাদুকা শিল্প ছোট হয়ে গেছে। গত ৩ বছরে চট্টগ্রামে বিশাল সংখ্যক কারিগরের যে সংকট তৈরি হয়েছে- তা আমরা পূরণ করতে পারিনি।

 

 

তিনি বলেন, এখন যে কারখানাগুলো সচল আছে তা মাঝারি ও ছোট আকারের। সংকটের কারণে ৫-১০ জন কারিগর নিয়ে একেকটি কারখানা চালাতে হচ্ছে। কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। আগে যারা বছরে ৫০ লাখ টাকার ব্যবসা করতেন, তারা এখন বছরে ১০-১২ লাখ টাকার বেশি ব্যবসা করতে পারছেন না। প্রচারণার অভাবে নতুন কোনো মার্কেটও পাওয়া যাচ্ছে না। বাকি টাকা উঠাতে না পেরে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।কারিগর সংকট কাটাতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার জরুরি বলে মনে করেন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন খাঁন।

 

 

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ঢাকা-ভৈরবের কারখানাগুলো আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে জুতা তৈরি করছে। এতে তাদের কারিগর ও সময় কম লাগছে। জুতার ফিনিশিংও ভালো হচ্ছে। দেখতে সুন্দর হওয়ায় ক্রেতারাও বেশি কিনছেন। চট্টগ্রামেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

 

 

মালিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা পাদুকা শিল্পের জন্য আলাদা একটি পল্লী চেয়েছিলাম সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু নানা কারণে সেটি হয়নি। ভৈরবে যেভাবে পাদুকা শিল্পের উদ্যোক্তারা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন- চট্টগ্রামে সেভাবে মিলছে না। ভৈরব থেকে বিদেশে জুতা রপ্তানি হলেও চট্টগ্রাম নতুন মার্কেট পাচ্ছে না। এ কারণে উদ্যোক্তারা চট্টগ্রাম ছেড়ে ভৈরবমুখী হচ্ছেন।

পূর্বকোণ/আরএ

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট