চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুকনো মরিচের দাম দ্বিগুণ

ইফতেখারুল ইসলাম

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বছরের ব্যবধানে শুকনো মরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। হাটহাজারী মরিচখ্যাত মিষ্টি জাতের শুকনো মরিচ বাজারে খুব কমই মিলছে। তবে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত কিছু শুকনো মরিচ যার কিছুটা হাটহাজারী মরিচের সাথে মিল থাকায় কোন কোন ব্যবসায়ী তা হাটহাজারী মরিচ বলে বিক্রি করছে।

 

 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমাদের মরিচের বাজার ভারতনির্ভর। ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি ভারতেও মরিচের ফলন মার খেয়েছে। তাই এই পণ্যটির দাম বেশি বেড়ে গেছে। মাসখানেক পর দেশীয় মরিচ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম নাগালের মধ্যে আসবে। টেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটে দেশীয় শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে ১৪৪.৪৪ শতাংশ।

 

 

সরকারি এই সংস্থার তথ্যমতে, এক বছর আগে দেশি মরিচের দাম ছিল কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। যা বর্তমানে ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, আমদানিকৃত শুকনো মরিচের দাম ৯২.৯৮ শতাংশ বেড়েছে। বছর আগে এই মরিচের দাম ছিল ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা। যা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা হয়েছে।

 

 

খাতুনগঞ্জের মসলার দোকান মেসার্স হাজি মো. ইসহাকের স্বত্বাধিকারী মো. সেকান্দর জানান, ভারতে কিছু মরিচের ফসল হানি হয়েছে। এরসাথে ডলার সংকট যুক্ত হয়েছে। পাইকারি বাজারে এখন সবচেয়ে কমদামি মরিচও বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাটহাজারী মরিচ পাইকারি ৫২০ টাকা। মিয়ানমার থেকে কিছু মরিচ এসেছে যা দেখতে অনেকটাই হাটহাজারী মরিচের মতই। কেউ কেউ তা হাটহাজারী মরিচ বলে বিক্রি করছে কেজি ৪৫০ টাকায়।

 

 

নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন বিবিরহাট এলাকার হর্স মার্কা মসলা মিলের স্বত্বাধিকারী মো. ইদ্রিস পূর্বকোণকে জানান, শুকনো মরিচের এত দাম তিনি আগে কখনো দেখেছেন বলে মনে পড়ছে না। তিনি জানান, হাটহাজারী মিষ্টি মরিচ কেজি এখন ৫৬০ টাকা। গত কোরবানির ঈদে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন। দুই মাস আগেও ৫০০ টাকা ছিল। রায়পুরের মরিচ (মধ্যম মানের ঝাল) কেজি ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েকমাস আগে ছিল কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। ভারতীয় ঝাল মরিচের কেজি ছিল ২৪০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়।

 

 

তবে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির সাথে শুকনো মরিচের দামের তেমন যোগসূত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজারে যেসব ঝাল কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ওইসব মরিচ চাষ হয় শুধু কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য। কারণ এসব জাতের মরিচ পাকলে ঝাল আরো বেশি হবে। মাস দেড়েক পর শুকনো মরিচের দাম কমতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওইসময় দেশে উৎপাদিত শুকনো মরিচ বাজারে আসবে। তিনি জানান, চাহিদার অধিকাংশ মরিচ আসে ভারত থেকে। মিয়ানমার থেকেও কিছু মরিচ আসে।

 

 

তবে বহদ্দারহাট বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা আহমদ মিয়া জানান, সম্প্রতি কাঁচা মরিচের দাম কমে ফের বেড়েছে। চলতি মৌসুমে কাঁচা মরিচের দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ বাজারে শুকনো মরিচের দাম বেশি। তাই কৃষকরা ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলছে না। কারণ মরিচ পাকলেই লাভ বেশি।

 

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে শুকনো মরিচের সবচেয়ে বেশি সরবরাহ হয় চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, ভোলা, রায়পুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। তবে তাতে চাহিদা মিটে না। ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। আগে দেশে শুকনো মরিচের দাম নির্ভর করতো পাইকারি বাজার ও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপারিদের ওপর। বেশ কিছুদিন ধরে দেশের কর্পোরেট কোম্পানিগুলো উৎপাদন মৌসুমে আগাম মরিচ কিনে মজুদ করে। যেকারণে স্থানীয় পর্যায়ে সংকট দেখা দেয়। ফলে কৃষকরা প্রকৃত বাজারমূল্য না পেলেও ভোক্তা পর্যায়ে এসে শুকনো মরিচের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়।

পূর্বকোণ/আরএ

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট