চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেশি দামে ধান বিক্রি খোলা বাজারে, ‘শূন্য’ হাতে সরকার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে পদে পদে হয়রানি করা হয়। ‘বকশিস’ না দিলে ধানে চিটা রয়েছে বলে গুদাম থেকে ফেরত দেওয়া হয়। তখন ধান আনা-নেওয়ায় উল্টো পরিবহন ও শ্রমিক খরচ গুনতে হয় কৃষকদের। লাভের চেয়ে বিক্রিতে অনিশ্চয়তা ও লোকসান গুনতে হয়। তার চেয়ে খোলা বাজারে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করাই ভালো। মাঠ থেকে নিয়ে যায় ফড়িয়ারা। বকশিস, চিটা-অনিশ্চয়তা থাকে না। -এই কথাগুলো বললেন বোয়ালখালী উপজেলা আমুচিয়া গ্রামের কৃষক শম্ভু নাথ। মঙ্গলবার কথা হয় শম্ভু নাথের সঙ্গে। শুধু শম্ভু নন, আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। একই কথা বললেন তারা।

 

 

কড়লডেঙ্গার এলাকার কৃষক সাবেক মেম্বার কুমকুম দাশ বলেন, ‘ধানের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরকারি ক্রয় দর কম। তাই চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’

 

 

খাদ্য বিভাগের তথ্য, চলতি আমন মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় নয় হাজার ২৩৫ টন ধান ও ৮০৬ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এবার চট্টগ্রাম থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।

 

 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারি দরের চেয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে লাভ বেশি পাচ্ছেন কৃষকেরা। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষক যেন ধানে ন্যায্যমূল্য পায়। সরকারের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ধানের সংগ্রহ নেই। ৪০ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।’

 

 

চলতি আমন মৌসুমে আতপ চাল সংগ্রহ করছে না সরকার। চালের আমদানি বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ মজুত বাড়তি থাকা এবং দেশে আতপ চালের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় আতপ চাল সংগ্রহ করছে না সরকার।

 

 

খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও সিলেটের কয়েকটি অঞ্চলে আতপ চালের ব্যবহার রয়েছে। এসব অঞ্চলে সরবরাহের মতো আতপ চাল মজুত রয়েছে সরকারের কাছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকায় আতপ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে না।’

 

 

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদুল আহমেদ বলেন, ‘বাজারে এখন নতুন ধান ১২শ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। ভালোমানের আমন ধান ১৩শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই দরে মাঠ থেকে ধান কিনছেন ব্যবসায়ীরা। তার বিপরীতে সরকারি দর হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৮ টাকা। মণে হচ্ছে ১১২০ টাকা। দাম কম পাওয়ায় সরকারের কাছে বিক্রি না করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন কৃষকেরা।

 

 

কৃষকেরা জানান, খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রির সময় ‘বকশিস’ গুনতে হয় কৃষকদের। ধান গুদামে নেওয়ার সময় পরিবহন ও শ্রমিক খরচও গুনতে হয়। কিন্তু দাম পান কম। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় খোলা বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষক।

 

 

প্রতি আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ও মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে সরকার। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে দেশীয় বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না সরকার। খাদ্য বিভাগ জানায়, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করলেও চাল সংগ্রহ করে মিল মালিকদের কাছ থেকে। চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করছে না সরকার। সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও পটিয়া উপজেলা থেকে ৮০৬ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে সীতাকুণ্ড থেকে ২৬৬ টন, ফটিকছড়ি থেকে ৪১৬ টন ও পটিয়া থেকে ১২৪ টন। সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে ৪০ টন।

 

পূর্বকোণ/আরএ

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট