চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চার্জশিটভুক্ত ৮ জনের মধ্যে ‘৬ মুখোশধারীর’ কেউ নেই

নাজিম মুহাম্মদ

২১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

মধ্যরাতে জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে ছয় যুবক। মুখে মুখোশ ও হাফ প্যান্ট পরা অস্ত্রধারী যুবকরা বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে। ওই ঘটনায় এখনো শিউরে উঠেন কাফকোর সাবেক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সাদেকের পরিবার। চান্দগাঁও থানা পুলিশ ঘটনার চারমাসের মাথায় আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। লুট হওয়া ২২ হাজার টাকা উদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে ।

 

 

কিন্তু গ্রেপ্তারের পর যে আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আদৌ মুখোশ ও হাফপ্যান্ট পরা সেই ছয় যুবকের কেউ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নন খোদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ রোকনুজ্জামান জানান।

 

 

তিনি জানান, ভিডিও ফুটেজ স্পষ্ট না হওয়ায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ফুটেজে দেখা যাওয়া ব্যক্তি কিনা তা নিশ্চিত নন তিনি। প্রশ্ন ওঠেছে তদন্ত কর্মকর্তা যদি নিশ্চিত না হন তবে ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে তারা কারা ? এ ফাঁকে আসল অপরাধী পার পেয়ে গেল না তো?

 

 

এ অবস্থায় লুট হওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধার না হওয়া এবং যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা আদৌ ডাকাতির ঘটনায় ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দিহান মামলার বাদীও। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধারের কথা জানিয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১ নভেম্বর আদালতে নারাজির আবেদন করেন মামলার বাদী মহিউদ্দিন সাদেক। গত বছরের ৮ নভেম্বর এক আদেশে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।

 

 

পিবিআই’র পুলিশ সুপার (মেট্রো) নাঈমা সুলতানা জানান, বাদীর নারাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। নারাজির আবেদনে বাদী জানিয়েছে পূর্বের তদন্তে সন্তুুষ্ট নন তিনি। গত নভেম্বর মাসে মামলার নথি আমরা হাতে পেয়েছি। একজন পরিদর্শক পদমার্যাদার কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করছেন।

 

 

পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার এসআই শরীফ রোকনুজ্জামান জানান, ছোটন এবং রাসেল নামে দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা ডাকাতির ঘটনার সময় কেউ ঘটনা সংগঠিত ঘরের বাইরে, কেউ রাস্তায় আবার কেউ পুকুর পাড়ে ছিল এমনটি জানিয়েছে। ফুটেজ দেখে সোহেল ও তার দেয়া তথ্যে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে জবানবন্দি দেয়নি সোহেল। ভিডিও ফুটেজ অস্পষ্ট হওয়ায় ডাকাতি করে পালানোর সময় ফুটেজে দেখা যাওয়া আর গ্রেপ্তারকৃতরা একই ব্যক্তি কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ।

 

 

গত বছরের ১৬ মে রাত সাতে তিনটায় এ ঘটনা ঘটে নগরীর মধ্যম মোহরায় কাফকোর সাবেক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সাদেকের বাড়িতে। পরদিন চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন মহিউদ্দিন। মামলার এজাহারে তিনি বলেন, ডাকাত দল ঘরের আলমিরার তালা ভেঙে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার যার বাজার মূল্য ৩৮ লাখ টাকা। ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি ডায়মন্ডের আংটি, ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি ডায়মন্ডের রিং ও নগদ ৬৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।

 

 

দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। রাত এগারোটার দিকে প্রতিদিনের মতো সবাই ঘুমাতে যায়। রাত আনুমানিক সোয়া তিনটার দিকে আলমিরার তালা ভাঙার শব্দ পেয়ে মহিউদ্দিন সাদেকের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি দেখতে পান ৩/৪ জন যুবক আলমিরার তালা ভাঙছে। তাদের দুই জনের হাতে কিরিচ ছিল। বাধা দিতে গেলে তারা মহিউদ্দিন সাদেককে কিরিচ দিয়ে পিঠে কোপ মারে। তার স্ত্রীকে হত্যার ভয় দেখায়। এ সময় ছেলে মেয়েরা প্রচণ্ড ভয় পায়। তখন তিনি বুঝতে পারেন ঘরে ডাকাত ডুকেছে।

 

 

ডাকাতদল আলমিরার তালা ভেঙে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও ডায়মন্ডের অলংকার কালো রংয়ের দুটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। পরে দেখা যায়, ঘরের নীচ তলার পশ্চিম পাশের ড্রয়িং রুমের জানালার গ্রিল কেটে তারা বাড়িতে প্রবেশ করেছে।

 

 

গ্রেপ্তার যারা : রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ইউনিয়নের মির্জাখীল গ্রামের ইমরান হোসেন ওরফে মানিক ওরফে কালো মানিক (২০), চান্দগাঁও মাঝির পাড়ার মানিক ওরফে ছোট মানিক (২৭), দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মোহাম্মদ নগর গ্রামের রমজান আলি ওরফে সোহেল (২৯), দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যম সরফভাটার পারভেজ (২৬), নোয়াখালীর পূর্ব চরজব্বার গ্রামের মো. রাসেল (২৫),বোয়ালখালীর আমুচিয়া গ্রামের মো. সোহেল (২৯), চান্দগাঁও পশ্চিম মোহরার সাহেদ চৌধুরী (২৪) ও পটিয়ার নিমতলা গ্রামের ছোটন (৩২)। এদের মধ্যে ছোটন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। বাকী ছয়জনের কেউ ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি।

 

পূর্বকোণ/আরএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট