চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সভাপতি-সম্পাদকের মতবিরোধ চরমে!

রায়হান উদ্দিন, চবি

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১:২১ অপরাহ্ণ

শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে গড়িমসিসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আবদুল হক। এর দুই ঘণ্টা পর সভাপতির ডাকা আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা দাবি করে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের এমন অবস্থানে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে চবি শিক্ষক সমিতিতে। এর ফলে সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন না করে চরম ভারসাম্যহীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক বছরের অধিক সময় ধরে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত বেশ কিছু শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড সভা সম্পন্ন না করে বারংবার সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাপক হয়রানি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মতো ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও দাবি করা হয়, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়ম ও অসংগতির ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ বা অভিযোগকে আমলে নিয়ে তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্য চক্র বা নিয়োগ কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযাগ্য ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি সৃষ্টিশীল চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রায় আড়াই মাস যাবত চলমান অচলাবস্থা নিরসনের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়া হয় এবং আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক আবদুল হক।

এদিকে সভাপতির দেয়া বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে শনিবার রাত ১১টার দিকে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাননীয় উপাচার্যের প্রতিশ্রুতি ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে এবং কার্যকরী সভায় সাধারণ সম্পাদকের অনুরোধকে না জানিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কর্তৃক এই আন্দোলন কর্মসূচি অপ্রয়োজনীয়। দাবি আদায়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই হঠাৎ এই কর্মসূচির আহবান করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থিতিশীল শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষক সমাজকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহবান জানান ড. সজীব কুমার ঘোষ।

প্রসঙ্গত, গত মাসখানেক ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিতে অন্তঃকোন্দল দেখা যায়। এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই একাই সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সভা ডাকেন বলে জানা যায়। এছাড়া গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে দুটি পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

জানা যায়, বর্তমান কমিটির সভাপতি ড. সেলিনা আখতার রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আবদুল হক। তবে বর্তমান উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় সভাপতি আবদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ আনা হয়। এতে নানা বিষয়ে উপাচার্যের আস্থাভাজান সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষের সাথে মতবিরোধ দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য। এসব ঘটনায় সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে দাবি করে সভাপতি ও সম্পাদককে একসাথে কাজ করার আহবান জানান শিক্ষকরা।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট