চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুগ্ধ আবেশ মেরিটাইম মিউজিয়ামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

পড়ন্ত বিকেল। দু’চারজন করে দর্শনার্থী ঘুরতে এসেছেন। তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আবার কয়েকজন এসেছেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে। ১ জানুয়ারি, নতুন বছরের প্রথম দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের একমাত্র মেরিটাইম জাদুঘরটি দেখতে আসেন প্রায় ৩০-৪০ জন দর্শনার্থী। বছরের প্রথম দিনে বেশ জমে উঠেছে বলা যায়। কারণ টিকিট কাউন্টারে খবর নিয়ে জানা যায় প্রতিদিন ২০-২৫ জনের মত দর্শনার্থী হয়। তবে আজকে তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।

 

২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম চালু হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এ মেরিটাইম মিউজিয়াম। তবে জাদুঘরটি এখনও অনেক দর্শনার্থীর কাছে অজানা রয়ে গেছে।

 

জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি চালু হওয়ার সময় দেশজুড়ে বৈশ্বিক করোনা মহামারী শুরু হয়। এ কারণে মানুষের কাছে খুব একটা জানাজানিও হয়নি জাদুঘর সম্পর্কে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কিছু দর্শনার্থী আসছেন। দেখে মনে হচ্ছে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সমুদ্রে চলাচল করা জাহাজগুলো যেন উঠে এসেছে তীরে। এখানে রয়েছে জাহাজসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধ জাহাজ ও কামান। সাজানো গোছানো কামানগুলো দেখলেই আগ্রহ জন্মায় একটু ছুঁয়ে দেখার, কাছে গিয়ে ছবি তোলার। তাই সুযোগ পেয়েই কাছে গিয়ে ছবি তোলার লোভও সামলাতে পারছেন না ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

 

যদিও জাদুঘর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, আগের চেয়ে বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ জনের বেশি দর্শনার্থী আসছেন। তবে এটি সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে এখানে শিক্ষিত শ্রেণির দর্শনার্থীরাই বেশি আসছেন। এখানে দেখা ও শেখার অনেক কিছুই আছে, যা সবারই দেখা ও জানা প্রয়োজন তাই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

 

জাদুঘরের সংগ্রহশালায় যা আছে :

নৌ ইতিহাস নিয়ে তৈরি মেরিটাইম জাদুঘরটিতে প্রবেশ করতেই একটি বড় মাঠ রয়েছে। এ মাঠে রয়েছে বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের আধুনিক নানান নৌযান, কামান ও গোলাবারুদ। মাঠের বাম পাশ থেকেই চোখে পড়ে ‘এডমিরালটি স্ট্যান্ডার্ড স্টকলেস এংকর, তারপর ‘সি২ মাইন, মিসাইল লঞ্চার, সি-৮০২ মিসাইল, টর্পেডো বোট, ৩০ মি.মি কামান, ম্যাগনেটিক এবং সাবসনিক ইনডাকশন গ্রাউন্ড মাইন টাইপ ৫০০ এস ও ৪০/৬০ মি.মি. বাফার গান’ নামের ১৯৭১ সালের যুদ্ধ কামান।

 

মাঠের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন। এ ভবনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র। এর পাশেই শোভা পাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণীদের শিল্পকর্ম ও চিত্র। যেগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠতেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বৃটিশ শাসনামলে বাণিজ্য করতে আসা বাংলাদেশের সামুদ্রিক অংশীদারগণের লোগো। কক্ষের ভেতরে রয়েছে সমুদ্রে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সমুদ্র ও নৌকার শিল্পকর্ম। রয়েছে সাম্পান, মালার নৌকা, চাঁদ নৌকা, বজরা, ঘাসি নৌকাসহ নানা রকমের নৌকা।

 

এছাড়া জাহাজের মধ্যে রয়েছে বাইচ/রেস বোট। স্বর্ণযুগের ঐতিহ্য অনুসরণ করে জমিদার ও নবাবরা বার্ষিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো এ নৌকার মাধ্যমে। সেই নৌযানটি এখানে স্থান পেয়েছে। আরো আছে নানারকম বাণিজ্যিক জাহাজ। এ জাহাজগুলোতে চাল, ডালসহ সব রকম দ্রব্যসামগ্রী আমদানি রপ্তানি করা হয়। অনুসন্ধানী ও উদ্ধারকারী উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে বিএম মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট একটি।

 

এটি ২৯ আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়। বানৌজা চিত্র নামের আরেকটি বাংলাদেশি নৌবাহিনীর টহল জাহাজ স্থান পায় এখানে। এমন অনেক নৌ শিল্পকর্ম দেখা যায় যা মুগ্ধ করে দর্শকদেরকে। ঘুরতে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আরিয়ান ও তাওহীদুল মিলন পরশ।

 

তারা বলেন, এখানে শুধু ঘুরতে এসেছেন এমন না। মূলত আমাদের সমুদ্র বিজ্ঞান নিয়ে একটি পড়াশোনার অংশ রয়েছে, তাই আসা। এখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্বন্ধীয় বন্দুক জাহাজ, টর্পেডো, নৌকাসহ জলসীমা নিয়ে নানা তথ্য রয়েছে। এগুলো আমাদের গবেষণার জন্য প্রয়োজন। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস মিলন।

 

তিনি বলেন, ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমি এমন কিছু জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করি যেখানে শিক্ষামূলক কিছু থাকে। চট্টগ্রামে এমন কিছু জায়গার মধ্যে এ জাদুঘরটি একটি। তাই এখানে আসছি। বাচ্চারাও দেখছি খুব উৎসাহ নিয়ে দেখছে।

 

জাদুঘরে প্রবেশ ফি :

জাদুঘরে প্রবেশের টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে শুধু মাঠের ক্ষেত্রে ১০ টাকা এবং মিউজিয়ামের ভেতরসহ প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। মূল জাদুঘরটি খোলা থাকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া মাঠ খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

 

 

পূর্বকোণ/আরএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট