কর রাষ্ট্রের হক উল্লেখ করে সামর্থবান প্রত্যেককে কর প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আমাদের এক থেকে দেড় কোটি ব্যবসায়ী আছেন। আমি ধরে নিলাম-এক কোটি ব্যবসায়ী কর দেওয়ার সামর্থ রাখেন। কিন্তু তারা সবাই কর দিচ্ছেন না। এ জন্য সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে। করের আওতা বাড়াতে হবে। সবাইকে কর দিতে হবে। কারণ দেশ চলে করের টাকায়।
গতকাল নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে কর বিভাগ আয়োজিত সেরা করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের কমিশনার সফিনা জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী, দীর্ঘ সময় কর প্রদানকারী, সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা এবং ৪০ বছর বয়সের নীচে তরুণ পুরুষ সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী- এই চার ক্যাটাগরিতে ৪২ জন সেরা করদাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মেয়র বলেন, করদাতাদের করভীতি দূর করতে হবে। কর আদায়ের পদ্ধতিও সহজ করতে হবে। না হয় কর ফাঁকি বাড়বে। সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ফি ৩০০ টাকা হলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তা নিচ্ছেন না। কারণ তাকে এর সঙ্গে ৩ হাজার টাকা অগ্রিম কর দিতে হচ্ছে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কীভাবে ৩ হাজার টাকা কর দেবেন? এতে লাইসেন্স নেওয়ার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব দেখা দরকার।
অনুষ্ঠানে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামান বলেন, কর আমি আমার দেশকে দিচ্ছি। এটি দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। কর জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের হক। এই হক আদায় করতে হবে। করসেবা প্রদানে এখনও এন্ট্রি লেভেলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সিনিয়র লেভেলে আন্তরিকভাবেই কাজ করছি আমরা। আগের ভীতিকর পরিবেশ এখন নেই। সেবা আধুনিকায়ন হয়েছে।
কর ব্যবস্থা আগের চেয়ে জনবান্ধব হয়েছে উল্লেখ করে কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য মকবুল হোসেন পাইক বলেন, বাংলাদেশে নানামুখী উন্নয়ন হচ্ছে। এর গর্বিত অংশীদার করদাতারা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার সম্মৃদ্ধ করতে করদাতারা যেমন কর দিচ্ছেন, তেমনি কর কর্মকর্তা এবং কর আইনজীবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। করসেবা নির্ঝঞ্ঝাট করতে সনাতনী পদ্ধতি ভেঙে কর ব্যবস্থা জনবান্ধব এবং আধুনিক করা হচ্ছে।
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কর ও ভ্যাট দিতে হবে। এসব না দিলে উন্নয়ন সম্ভব না। দেশ এগিয়ে যাবে না। তবে যারা সব সময় ভ্যাট ও কর দেয়- শুধু তাদের উপরই ছুরি চলে। ব্যবসায়ী আছে কোটির বেশি। কিন্তু ভ্যাট ও কর দিচ্ছেন ১০-১৫ লাখ। তাই ভ্যাট ও করের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে। চট্টগ্রামের মানুষ ভ্যাট ও কর দিতে তৈরি। কিন্তু তাদের যেন হয়রানি করা না হয়।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর কমিশনার সামিয়া আখতার বলেন, যাদের দেশ নেই তারাই বুঝেন- দেশ কি জিনিস। এই যে আমরা নিজেদের দেশে, দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি- এই মাটির জন্যই আমাদের কর দিতে হবে। রোহিঙ্গারা শত কোটি টাকা দিলেও আমরা কর নেবো না। কর দিতে পারা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের। এই জন্য কর দিতে হবে। কর আদায় আরো বাড়াতে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এর কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, উন্নয়ন হতে হবে টেকসই উন্নয়ন। এ জন্য বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দরকার। কর আদায় বাড়লেই দেশের রাজস্ব আদায় বাড়বে। আপনাদের দেওয়া কর সরকারি কোষাগারকে সমৃদ্ধি করবে। সভ্যতা ও উন্নয়নের জন্য আপনারা যারা কর দিয়ে সম্মানিত হয়েছেন তাদের অভিনন্দন। আপনারা দেশের উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার। আপনারা আমাদের ব্রান্ড এম্ব্যাসেডর।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩ এর কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সারা বছর ধরে কষ্টার্জিত আয়ের নির্দিষ্ট অংশ কর দিয়ে সরকারি কোষাগার সম্মৃদ্ধ করছেন করদাতারা। এজন্য আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। কর বিভাগ সব সময় আপনাদের সেবা দিতে মুখিয়ে আছে। আগে আমরা কর আদায় করতাম, এখন আহরণ করি। আগে কর দিতে আপনারা আসতেন। এখন কর নিতে আমরা যাই। আপনাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন অনেকে। কিন্তু সবাই কর দেন না। বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শত কোটির ঘরে ছিলো, এরপর হাজার কোটি টাকা হয়েছে- এখন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজ করছি। কখনো পুরোপুরি সফল হয়েছি। কখনো কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। তবে আমরা কাজ করে গেছি।
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দাশ বলেন, সম্মাননা পাচ্ছেন বলে করদাতাদের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। দেশের উন্নয়নে কর দেওয়ার বিকল্প নেই। করদাতাদের সহায়তা দিতে চট্টগ্রামে ৪ হাজার কর আইনজীবী নিরলসভাবে কাজ করছেন। যে কোনো প্রয়োজনে তারা করদাতাদের পাশে থাকবেন। অনুষ্ঠানে সেরা করদাতাদের মধ্যে অনুভুতি প্রকাশ করেন, মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরী ও পুস্প রানী দাশ।
পূর্বকোণ/আর