চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পাহাড় কেটে জমিদারি

ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রৌফাবাদে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২৭ পূর্বাহ্ণ

গত সপ্তাহে ধস মিয়ার পাহাড়ে
প্রশাসনের তালিকায় মিয়ার পাহাড়ে
৩২ ও ভেড়া পাহাড়ে ১১ বসতি
বাস্তবে দুই পাহাড়ে রয়েছে
কয়েক শ পরিবারের বসবাস

নগরীর অক্সিজেন রৌফাবাদ এলাকায় মিয়ার পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি গড়ে উঠছে। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পর নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েক শ পরিবার। গত সপ্তাহে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি কারো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েকজন নেতা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন। বস্তিঘর নির্মাণ ছাড়াও পাহাড় কেটে জায়গা বিক্রি করা হচ্ছে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের পরও অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বন্ধ হয়নি।

দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে পাহাড়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েক স্থানে পাহাড় কেটে টিলায় পরিণত করা হয়েছে। এতে রয়েছে কাঁচা ও আধা পাকা ঘর। এসব ঘরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও রয়েছে। গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি সরবরাহও করা হয়েছে।
বাসিন্দারা জানায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন। সরকার দলীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া ও জায়গা বিক্রি করে আসছেন। আবার অনেকেই জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রৌফবাদে মিয়ার পাহাড় ছাড়াও আশপাশের আরও দুটি দখল করে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পাহাড়ে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় দেখা যায়, মিয়ার পাহাড়ে ৩২ পরিবার ও ভেড়া পাহাড়ে ১১ পরিবারের অবৈধ বসতি রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, মিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে কয়েক শ পরিবারের বসবাস রয়েছে। কাঁচা ও সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, পাহাড় দখল-বেদখল নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছিল। কয়েক বছর ধরে একক নিয়ন্ত্রণে নেয় যুবলীগ নামধারী একটি গ্রুপ। তারা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে চলেছে।
অক্সিজেন শিল্প এলাকা হওয়ায় এখানে বসত ঘরের চাহিদা বেশি রয়েছে। সেই সুযোগে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা পাহাড় কেটে অবৈধ ঘর নির্মাণ করে জমিদারি কায়দায় ভাড়া দিয়ে আসছেন। গার্মেন্টস শ্রমিক ও নি¤œ আয়ের লোকজন কম ভাড়ায় এসব ঘরে বসবাস করে আসছে।
প্রতি বছর বর্ষার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। চলতি বর্ষার আগেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের পর কার্যকরী উদ্যোগ না নেওয়ায় অবৈধ বসতি উচ্ছেদ ঠেকানো যাচ্ছে না।
মূলত শুষ্ক মৌসুমেই পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতঘর নির্মাণ চলে আসছে।
জানা যায়, রৌফাবাদের পাহাড় দখল-বেদখল নিয়ে মামলা ও সংঘাত লেগে রয়েছে। দখলদারিত্ব বজায় রাখতে অনেকেই ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। সংঘাত-সংঘর্ষে বস্তিবাসীদের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও পাহাড়ে বসবাসকারী বস্তিবাসীদের ব্যবহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৮ জুন (ঈদের দিন) টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ও দেয়াল ধসের ঘটনায় পাঁচ শিশুসহ ছয়জন মারা গিয়েছিল। পশ্চিম ষোলশহর আমিন জুটমিল এলাকার আমিন কলোনিতে দুটি কাঁচাঘরের ওপর মাটি ধসে মারা যায় একই পরিবারের তিন শিশু।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট