চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ : মানুষ মরলেও দেখার নেই কেউ : নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম

‘এখানে একটা মানুষও কি নেই’

ইমাম হোসাইন রাজু

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে চারটি এম্বুলেন্স। ঘড়ির কাটায় সময় বিকেল তিনটা। ভেতরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় লোহাগাড়ার চুনতি থেকে এসেছে আট রোগী। গাড়ির ভেতর থেকেই রিনা আক্তার নামে এক রোগীর স্বজন কান্নারতভাবে চিৎকার করে বলছে ‘এখানে কি একটা মানুষও নেই, আমার বোন মরে যাবেতো। তারে কেউ নামান, ডাক্তার দেখাতে হবে’। পাশেই আহত বোনের মাথা ও পা থেকে ঝরছে রক্ত। তবুও পাওয়া যায়নি হাসপাতালের কোন কর্মচারী বা আয়া-বয়কে। নেই কোন ট্রলিও। অন্তত আধঘণ্টা পর কয়েকজন যুবক খুঁজে একটি ট্রলি নিয়ে এসে আহত একজনকে নামালেও বাকি সাতজন রয়ে গেল গাড়িতেই।
এই চিত্র শুধু গতকাল রবিবার বিকেলের-ই নয়। প্রতিদিনই এমন চিত্রের দেখা মেলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সরকারি এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। যেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে পদে পদে প্রতিকূলতার সম্মুখীনও হতে হয় তাদের।
তথ্য অনুসারে, প্রতি দুই মিনিটে একজন রোগী সেবা নিতে আসে জরুরি বিভাগে। কিন্তু ঠিক মতো কর্মস্থলে পাওয়া যায়না কোন কর্মচারীকে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারিভাবে কোন ওয়ার্ড বয়-আয়া না থাকলেও জরুরি বিভাগের জন্য বেসরকারিভাবে নিয়োগকৃত ৩০ জন ওয়ার্ড বয় রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এইসব ওয়ার্ড বয় ঠিক মতো তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। বরং ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগী পড়ে থাকলেও গল্প ও ফাঁকিবাজির মধ্যেই চলে তাদের সময়ের হিসেব। এর মধ্যেই কোন রোগীর মৃত্যু হলেও তাদের নেই কোন জবাবদিহিতাও।
গতকাল রবিবার সকালে জরুরি বিভাগের ফ্লোরে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত জন্ডিসের এক রোগী পড়ে ছিল। কিন্তু সেখানেই মৃত্যু হয় তার। কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ফ্লোরে পড়ে ছিল। কিন্তু কোন বয় তাকে রিসিভ করেনি। ওই ব্যক্তির সাথে ছিল মাত্র একজন স্বজন। একজন ওয়ার্ড বয়ও যদি তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেত, তাহলে হয়তো বাঁচতে পারতো রোগী’। ‘শুধু ওই রোগীই নয়, সবসময় একই চিত্র দেখা যায় এখানে। কোন বয়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের খোঁজও থাকেনা বলেও অভিযোগ করেন স্বয়ং পুলিশ সদস্যরা’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জরুরি বিভাগের জন্য তিন শিফটে বেসরকারিভাবে ৩০ ওয়ার্ড বয় কাজ করে থাকেন। সকালের শিফটে ১২ জন, বিকেলে ৮ এবং নাইটে ৬ জন কাজ করেন। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন, সে তুলনায় যেমন জনবল কম। তেমনি কাজে পাওয়া যায়না তাদেরকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, একহাজার তিন’শ তের শয্যার বিপরীতে সরকারিভাবে পাঁচ’শ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, তাতে কমপক্ষে প্রতি শিফটে ৩০ জন করে জনবল দরকার। তবে সে পরিমাণ জনবল না থাকার কারণে এই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সংকট সমাধানে বহু আগেই ২৫০ জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় যদি জনবল না দেয়, তাহলে আমাদের কি করার আছে। তবুও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছু লোক নেয়া হয়েছে। কিন্তু দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে একটু কষ্টতো সহ্য করতে হবেই’।
একজন রোগীর সঙ্গে একজন কর্মচারী চলে গেলে অন্য রোগী আসলে তাদের অপেক্ষা করাটা স্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বয়ের জন্য অপেক্ষা না করে রোগীর স্বজনদেরও কাজ করা দরকার। যারা ঠিকমত কর্মস্থলে থাকবে না, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব’।

 

পূর্বকোণ/ রাজু

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট