চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আটা-ময়দার আড়ালে ভারতে স্বর্ণপাচার পংকজের

রাউজানের রুবেল, সাতকানিয়ার লোকমান, রাঙ্গুনিয়ার আলমাস বাবুল স্বর্ণবার সরবরাহ করতো

নাজিম মুহাম্মদ

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

আটা-ময়দা ব্যবসার আড়ালে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণপাচার করছে নবাবগঞ্জের পংকজ সাহা চৌধুরী। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শত শত স্বর্ণের বার চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে যেতো পংকজ। হোয়াটসআপ ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেন পাচারকারীরা। ঢাকায় বসে স্বর্ণপাচারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে পংকজ।
রাউজানের নোয়াপাড়ার আশরাফুল হক রুবেল, সাতকানিয়ার লোকমান গণি ও রাঙ্গুনিয়ার আমিনুল হক বাবুল ওরফে আলমাস বাবুল পাচারকারী পংকজকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার সরবরাহ করতো। নগরীর খুলশী কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় বসবাস করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রুবেলের নাগাল কখনো পায়নি। বাবুল ও লোকমান চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের অভিজাত বস্ত্রবিপণী আলমাস শপিংয়ের কর্মচারী।
অবৈধ স্বর্ণপাচার করতে পংকজ ভুঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে তিনটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করতো তার স্বর্ণপাচারকারিরা। চলতি বছরের ৩মার্চ নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড় থেকে এক’শ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। জব্দ করা হয় একটি প্রাইভেটকার। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে স্বর্ণপাচারকারী সিন্ডিকেটের তথ্য পায় গোয়েন্দারা। পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল স্বর্ণপাচারকারী পংকজ কিংবা রুবেলের হদিস পায়নি। চলতি বছরের ৩মার্চ নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড় থেকে ১০০ পিস স্বর্ণেরবারসহ প্রণয় কুমার সাহা ওরফে লাবু ও বিল্লাল হোসেন ওরফে কাদের নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি স্বর্ণপাচারের অভিযোগে দশজনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল কালাম। তদন্ত প্রতিবেদনে স্বর্ণপাচারকারী সিন্ডিকেটের তথ্য উঠে আসলেও বিদেশে থেকে চট্টগ্রামে আসা স্বর্ণপাচারের রুট সম্পর্কে কোন তথ্য উঠে আসেনি।
তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী রাউজানের রুবেল ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন কৌশলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণেরবার চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। খুলশীর কুসুমাবাগের বাসা থেকে সেসব স্বর্ণের বার নবাবগঞ্জের পংকজ সাহা নিয়ে যেতো ঢাকায়। এসব স্বর্ণবার বহন করতে ভুয়া নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে তিনটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতের জনৈক গোপালের কাছে স্বর্ণেরবারগুলো পাঠানো হতো। চাঁদপুরের বিশ্বজিত কুমার সেন, কুমিল্লার নারায়ণগঞ্জের প্রনয় কুমার সাহা ওরফে লাবু, কুমিল্লার লোকনাথ রায়, মো. রাসেল ও মো. বিল্লাল স্বর্ণবার বহনের কাজ করতো। আলমাস শপিংয়ের কর্মচারী বাবুল আর লোকমানও ঢাকা থেকে যশোর সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে স্বর্ণবার পাচার করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। স্বর্ণপাচারের কাজে ব্যবহৃত তিনটি প্রাইভেট কারের মধ্যে একটি জব্দ করা হলেও বাকি দুটির হদিস এখনো মেলেনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বর্ণবার আর প্রাইভেটকারসহ ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গোপাল চন্দ্র রায়কে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গোপাল জানিয়েছে, স্বর্ণবহনের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের কাগজপত্রে গোপালের নাম ব্যবহার করা হলেও ঠিকানা সঠিক দেয়া হয়নি। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে একই ধরনের আরো দুটি প্রাইভেটকার স্বর্ণেরবার বহনের কাজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে তারা কেউ কাউকে চিনেনা। এমনকি একজন অন্যজনের বাসার ঠিকানা কিংবা মুঠোফোনের নম্বরও জানে না। চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেয়ার পর ঢাকায় একটি নির্দিষ্ট স্থানের পর প্রাইভেটকারগুলো হাতবদল হয়ে যেতো। এরপর স্বর্ণবারগুলো কোথায় রাখা হতো তা বহনকারীরা জানে না। বহনকারীদের প্রতিবারই নতুন সিমকার্ড দেয়া হতো। তারা হোয়াটসআপে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতো।
স্বর্ণপাচারে অভিযুক্ত যারা : স্বর্ণপাচারের অভিযোগে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হচ্ছে, ঢাকার নবাবগঞ্জের মেলেং বাজার এলাকার প্রবেস সাহার ছেলে পংকজ সাহা চৌধুরী, রাউজান নোয়াপাড়ার মৃত আমিনুল হকের ছেলে আশরাফুল হক প্রকাশ রুবেল, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের মৃত পরেশ চন্দ্র সাহার ছেলে প্রণয় কুমার সাহা ওরফে লাবু, চাঁদপুরের কচুয়া থানার বায়েক গ্রামের মৃত নারায়ণ চন্দ্র সেনের ছেলে বিশ্বজিত কুমার সেন ওরফে রঙ্গ, কুমিল্লার তিতাস থানার গোবিন্দপুরের মৃত নারায়ণ চন্দ্র সেনের গোপাল চন্দ্র রায়, গোপালের ভাই লোকনাথ রায়, শরিয়তপুরের ডামুড্যা থানার মৃত হাশেম সর্দারের ছেলে বিল্লাল হোসেন সর্দার ওরফে কাদের, কুমিল্লা বুড়িচংয়ের মৃত আবদু মিয়ার ছেলে মো. রাসেল, সাতকানিয়ার কেওচিঁয়ার মৃত আশরাফ মিয়ার ছেলে লোকমান গণি ও রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়া ইউনিয়নের মৃত নুর আহমদের ছেলে আমিনুল হক বাবুল প্রকাশ আলমাস বাবুল। এরমধ্যে প্রণয় কুমার, বিশ্বজিত, গোপাল চন্দ্র, লোকনাথ, বিল্লাল ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট