চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী

৪ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

‘সাহসিকতা এবং ঝুঁকি এই দুই-ই জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত। প্রকৃতপক্ষে, জীবনের ঝুঁকি নিতে না পারলে এবং মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়’।

 

১৯৭১ খ্রি. মহান স্বাধীনতার বিজয়ের অব্যবহিত পরে পাকিস্তানের কারাগারে  কঠিন-কঠোর বন্দীজীবন অতিবাহিত করে ২৮৯ দিন পর বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি দেশ পুনর্গঠনে মনযোগ দেন।

 

খুব স্বল্প সময়ে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেন। বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ১৩১৪ দিনের মাথায় পৃথিবীর ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেন। ওআইসি ও কমনওয়েলথের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে জাতিসংঘে বাংলায় ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদান করেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।  ১৯৭৫ খ্রি. বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৪ খ্রি. মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থানকারী কতিপয় দেশের অসহযোগিতা ও সরাসরি ষড়যন্ত্রে এবং বন্যা পরবর্তী বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কেনা খাবার সময় মত দেশে না পৌঁছাতে চক্রান্ত হয়। স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় এই দুর্ভিক্ষ বঙ্গবন্ধু সরকারের জন্য ছিল চরম দুর্ভাগ্য, কষ্ট ও অবমাননাকর। মুক্তিযুদ্ধেই আর্থিক ক্ষতি ছিল প্রায় ১.২ লাখ বিলিয়ন ডলার। মরার উপর খাঁড়ার ঘা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে সরকারের দায় ছিল আকাশ পরিমাণ। এক কোটি গৃহহারা শরণার্থী, ১২৫,০০০ ভারতীয় সৈন্যের বোঝা, ৬০,০০০ আলবদর রাজাকার ও ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের দুবেলা খাবার। ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট রেল সড়ক-সেতু, নৌপথ, অফিস, ভবন, বিমানবন্দর ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত।  যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীনের চরম বিরোধিতা, মুসলিম দেশসমূহের অসহযোগিতা বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল।

 

কথিত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন রবিনসন ‘ইকোনমিক প্রোসপেক্টস অফ বাংলাদেশ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে ম্যালথাসিয়ান স্টেগনেশনের সাথে তুলনা করেন। যার পরিণতি দুর্ভিক্ষ ও মুত্যু। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন মন্তব্য করে বাংলাদেশকে নিয়ে। যা ছিলনা মানবিকতায় পরিমিত, ছিল না কূটনীতির শিষ্টাচার অনুসৃত।

 

তখনকার মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ সাথে তুলনা করেন। গণচীন ঘোষণা করে, ‘তথাকথিত বাংলাদেশ হিন্দুস্তানের ষড়যন্ত্রের ফসল।’

 

এভাবে বহুমাত্রিক ও বহুমুখী বৈপরীত্যকে পিছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুর সরকার সীমিত সময়ে পৃথিবীর ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১৩১৪ দিনের মাথায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

 

১৯৭৫ খ্রি. স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে জার্মান সফরের ১৫ দিনের মাথায় বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূতের বাসা থেকে ঢাকার নির্মম হত্যাকা-ের খবর পান তারা। তখন শেখ হাসিনার বয়স মাত্র আটাশ বছর।

 

দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ভারত ও ইউরোপে প্রবাস জীবন যাপন করে অবশেষে পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন দেশে চলছিল সেনা গহবরে জন্ম নেয়া কথিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।

 

ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তিতে কুপথ, বিপথ পথপরিক্রমা করে, দীর্ঘ মাস ও বছর এ ঘর ও ঘর করে অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যয়কে অবলম্বন করে দেশ এগিয়ে যেতে থাকে। ভিন্নমাত্রার সংকটকে পিছনে ফেলে প্রিয় স্বদেশ শেখ হাসিনার আপসহীন নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পর ১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 

জিয়া ও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিবিড়ভাবে মাঠে ময়দানে, জনগণের পাশে থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে, তিলে তিলে পোক্ত করতে থাকেন। মৃত্যুর ঝুঁকি আসে, আঘাত আসে, বার বার সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা এবং এদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আশির্বাদে বেঁচে যান তিনি। বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

 

বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৯৬ খ্রি.। পাহাড় সমান সংকটকে তিনি এক এক করে অপসারণ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি পিতার গৃহীত দেশ গঠনের দর্শন ও প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ করেন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পাদন করেন। দেশেবিদেশে প্রশংসিত হন।

 

এভাবেই চতুর্থবার ক্ষমতা গ্রহণের প্রান্তিকে এসে আমরা যদি ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের দেশের মানুষের গড় আয়ুকে তিনি ৪৭ বছর থেকে ৭৩ বছরের ওপরে তুলে এনেছেন। উপমহাদেশের অপরাপর দেশের তুলনায় এটিই সর্বোচ্চ। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১৪৪ থেকে কমিয়ে ২১ জনে নামিয়ে এনেছেন। প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ১৭৩ জনে নেমে এসেছে। সাক্ষরতার হার তিনি ৭৬ ভাগে তুলে এনেছেন। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৮২%। এ হারকে তিনি ২০% এ নামিয়ে এনেছেন।

 

দেশের মানুষের আর্থিক, সামাজিক, পরিবেশগত সংকটগুলো ক্রমেই দূরীভূত হচ্ছে। দেশ মহিমান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ফসলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার প্রয়াসে ক্রমেই সফলতা অর্জন করে চলেছে তার সরকার। চেতনার এই পথে চলতে গিয়ে আমরা দীর্ঘ প্রায় সাতাশ বছর অপচয় করেছি। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে মনের মতো করে গড়ার যে প্রত্যয় ধারণ করতেন , সেই সোনার বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অবয়ব দেয়ার জন্য তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সফল হচ্ছেন।

 

২০০৯-১০ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী চরম মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে গেছে অনিরুদ্ধ গতিতে। এটি তার সফলতার অনন্য দৃষ্টান্ত।

 

আমাদের জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে গত দেড় দশকে সাড়ে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তা ২৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

 

রপ্তানি আয় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩% হলেও শিল্পে ৩৫% এবং সেবা খাতে তা ৫২% অর্জন করেছে। জিডিপির আকার ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

 

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বছর আগের ৭৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়ে এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে স্থিত আছে। এরই মধ্যে জাতীয় বাজেটের আকার এগার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার উপরে উন্নীত হয়েছে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে যা ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আকার দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

 

গত এক দশকে গড়ে ৬.৬% এবং পরের তিন বছর ৭% এর ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ হয়েছে। কুখ্যাত বিশ্বমারি সত্ত্বেও দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সারা দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশটি কৃষি প্রধান দেশ হয়েও অত্যাধুনিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য ধারণ ও লালন করে চলেছে। এসবই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কৃতিত্ব।

 

এসব কারণে সেন্টার ফর ইকোনমিক এন্ড বিজনেস রিসার্চ-বৃটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ২০৩৫ এর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে মন্তব্য করেছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির দেশের অন্যতম। জিডিপি হিসাবে যার অবস্থান ৪১ তম।

 

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট নির্ধারিত তিনটি সূচক- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা-প্রতিটিতে নির্ধারিত স্কোরের বেশি অর্জন করায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।

 

মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অর্থনীতির টিকে থাকার সক্ষমতা ও অন্যান্য সামাজিক সূচকের বিচারে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য উন্নয়নযাত্রার অসামান্য মাইলফলক এসব।

 

গত ৫ বছরে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিচারের এশিয়ার সবচেয়ে গতিময় দেশ বাংলাদেশ। করোনাকালে ও দেশটিতে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭.৮% হারে। চীনে যা ছিল ৬.৯%, ভারতের ছিল ৩.১%, ভিয়েতনামে ছিল ৪%।

 

পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতিতে ভোগ বেড়েছে। কৃষির মজুরিও বেড়েছে। করোনা মোকাবেলায় দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বক্রমে ১২১টি দেশের ভিতর পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।

 

কোভিডকালীন প্রধানমন্ত্রী ১ কোটি ৩০ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছেন। ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নিয়ে এসেছেন। ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সর্বোচ্চ জিডিপির মধ্য দিয়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনোমিস্ট ৬৬ সবল অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশকে নবম স্থান দিয়েছে। দেশের সামাজিক সুরক্ষায় মানুষের উন্নতি হচ্ছে। গৃহহীনরা ধারাবাহিকভাবে গৃহ পাচ্ছে।

 

১৯৭২-৭৩ এ যে দেশটিতে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ছিল ৮২%,  ২০১৬ সালে তা নেমে আসে ২৪.৫% এ। ২০১৯ এ তা ২০.৫% এর কাছাকাছি চলে আসে।

 

১৯৭২ সালে দেশে দানাদার খাবারের উৎপাদন ছিল ৯৯ লাখ টন। চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ খাবার উৎপন্ন হত তখন। ২০২২ সালে এসে তা সাড়ে ৪ কোটি টনকে ছাড়িয়ে গেছে। বছরে মাথাপিছু ১৮০ কেজি পরিমাণ চালের হিসাবে দেশে চাল দরকার ৩১.৩৯  মিলিয়ন টন।  বর্তমানে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ৩৪.৮৮ মিলিয়ন টন। যা পৃথিবীর উৎপাদিত মোট চালের ৭%।

 

দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। ভূমির পরিমাণ কমেছে। কিন্তু কৃষির বহুমুখীকরণ এবং আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছে। ১৯৭৩-৭৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে দু-ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২৫%। জল সেচ দেয়া যেত ১৫% কৃষি জমিতে। জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। বিদেশের ৬৫ দেশে ২৫ প্রকার পণ্য রপ্তানি করা যেত তখন। যার মধ্যে মূলতঃ ছিল পাট, চা, চামড়া। আজকের বাংলাদেশ ৭০ ভাগ জমিতে জলসেচ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। বহু ফসলি জমির পরিমাণ বেড়েছে।

 

বাংলাদেশ থেকে ৮০০ প্রকার পণ্য পৃথিবীর ২০০ দেশে নিয়মিত রপ্তানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশেই দেশি-বিদেশি প্রায় ৮০ প্রকার ফল-মূল উৎপাদিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।

 

এভাবেই দেশটি পৃথিবীতে স্বীকৃত-অস্বীকৃত ২৩৩ টি দেশের মধ্যে আকারের দিক থেকে ৯৪ নম্বর ক্রমে অবস্থান করেও উৎপাদন ও কৃষিজ বহুমাত্রিক সূচকে ১ থেকে ১০ নম্বর শীর্ষক্রমে অবস্থান করছে।

 

তৈরি পোশাক, ইলিশ মাছ, মিঠা পানির মাছ, সবজি, প্রোটিন জাতীয় খাবার, চাল, আলু, ফলমূল, কাঁঠাল, ছাগলের দুধ, প্রভৃতি উৎপাদনে দেশ শীর্ষক্রমে অবস্থান করে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, চিন্তা, শ্রম এবং গভীর দেশপ্রেম বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে চলেছে।

 

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত সময়োপযোগী এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্তসমূহের সুফল এই অগ্রযাত্রা।

 

বর্তমানের বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সবগুলোকে অর্জন করে চলেছে। ডেলটা প্ল্যানের স্বপ্ন ধরার প্রচেষ্টায় অবিরত অধ্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। দেশে ইতিমধ্যেই একশটি শিল্প জোন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পাদন হয়েছে।

 

কর্মসংস্থান সংকট দূর করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাহনে যাত্রী হচ্ছে দেশ। কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুঁড়ির দেশটি বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ঘোরাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের  তৈরি পোশাক পড়াচ্ছে। তৈরি ওষুধ সরবরাহ করছে। বাঙালি মনীষার অকুতোভয় নেত্রী, শেখ হাসিনাই এই সমৃদ্ধির পথের একক, অতুলনীয় ও অদম্য নেত্রী।

 

দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত বিবর্তন প্রভৃতি বিবেচনা করেই গৃহীত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০।

 

সারা দুনিয়ার মানুষকে তাক লাগিয়ে তিনি পরিবেশ চর্চা করছেন। পরিবেশের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পৃথিবীর মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। পৃথিবীর মানুষকে পরিবেশ চেতনায় তাড়িত করছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন । পরিবেশ বিশ্ব ফোরামে তাঁর মতামত, বক্তব্য প্রশংসার সাথে গৃহীত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রশংসিত হচ্ছে, সম্মানিত হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের ভূখ-গত জাতিসত্তার সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

মনে করা হয়, মানুষের স্থানীয় বাজারে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো গেলে, রপ্তানির বহুমুখীকরণ ঘটলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে, অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটলে, দুর্নীতির বিদ্যমান লাগাম টানতে পারলে, মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা বিস্তৃত ও নিশ্চিত করতে পারলে-সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে কাক্সিক্ষত সময়ের আগেই দেশ সমৃদ্ধ বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।

 

এর জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্ব অনিবার্য, অপরিহার্য। শেখ হাসিনার নির্ভেজাল হাত ধরেই ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৪৩% দাঁড়িয়েছে। যা এশিয়াতে সর্বোচ্চ।

 

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ কথা বলছে। প্রায় দেড় যুগ আগে বাংলাদেশের ডিজিটাল যুগের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে ‘আমার গ্রাম -আমার শহর,’ ‘কানেক্টিং বাংলাদেশ,  ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড,’ ‘হাওড়া এন্ড বিল, ‘ ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ কৃষকের অ্যাপস, প্রভৃতি অত্যাধুনিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ পরশ ও নজরদারিতে।

 

ইতিমধ্যেই তিনি ‘উইটসা এমিনেন্ট পারসন্স এওয়ার্ড’ লাভ করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটানোর জন্য তাঁর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ ‘এসোসিও লিডারশিপ এওয়ার্ড’ লাভ করে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছেন।

 

আইসিটি খাত থেকে বছরে আয় হচ্ছে ২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তা ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

 

লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের। মাথাপিচু আয় হবে তিন হাজার ডলারের বেশি। বর্তমান জিডিপির আকার ৪১৬ বিলিয়ন ডলার।

 

গত অর্থবছরে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫%। রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬%।

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৯%।

ইতিমধ্যেই কথিত সর্তকতাবাদীদের আহাজারি সত্ত্বেও নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা মেট্রো রেল দৃশ্যমান হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভূত উন্নতি হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। উৎপাদনে গিয়েছে। ব্লু ইকোনোমিক আবহে বাংলাদেশ স্বপ্নকে জয় করতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক আস্থার প্রতীক হয়ে পদ্মা সেতু আমাদের চেতনার ভিত্তি হিসেবে আমাদের প্রত্যয় ও সক্ষমতাকে জানান দিচ্ছে।

 

দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা সাড়ে পঁচিশ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িড়য়ে গেছে। দৈনিক উৎপাদন সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট স্পর্শ করছে। সমসাময়িক বৈশ্বিক যুদ্ধ ও তথাকথিত স্যাংকশন বিশ্বব্যাপী মানবিক সমাজে সমস্যা তৈরি করেছে। এর প্রেক্ষিতে অপরাজনৈতিক তৎপরতার অর্থহীন আহাজারি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

 

বিশ্বব্যাংক সহ আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থা কোনভাবেই এ আহাজারিকে গ্রহণ না করলেও মহলবিশেষের উন্মাদনা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসে নিচ্ছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এবং আমাদের সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি।

 

এর উদ্দেশ্য ও উপসংহার স্বচ্ছ নয়, সততা নির্ভরও নয়। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মে এই বিশেষ শ্রেণীর নিবর্তনমূলক আহাজারি নতুন নয়। এরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অর্জনকে ভ্রান্তখাতে প্রবাহিত করার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখে।

 

অতীতে কয়লা বিদ্যুৎ এবং দেশের অগ্রগতির সূচক মেগা প্রকল্প নিয়ে এরা এরকম আহাজারি করেছে। এদের কথা বর্জন করাই উত্তম। তাতে শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের উদ্ভাস আরো বিস্তৃত হবে।

 

প্রায় এক দশকে পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর এসব অর্জন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্জন, সততা ও নিষ্ঠার অর্জন। নিরলস পরিশ্রমের অর্জন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অর্জন। তাঁর রক্তের উত্তরাধিকারের অর্জন।

 

স্বাধীনতা এনে দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর বক্তব্য অনুসারে, ‘উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অতীত বর্তমানের সকলকে ছাড়িয়ে যাওয়া নেতা বঙ্গবন্ধু শেখে মুজিবুর রহমান। যিনি বাঙালিকে বীরের জাতিতে সম্মানিত করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন।’ স্বাধীনতাকে সুসংহত করে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের সফল ব্যক্তি হিসেবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে ধাপে ধাপে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।

 

এ মুক্তি সামাজিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি, চেতনার মুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মুক্তি। যে মুক্তির কথা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বারবার উচ্চারণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বারবার বলেছেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কঠিন।’

 

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আচারিক, ব্যবহারিক শিক্ষা তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে অতি দ্রুত আদর্শিক রাজনীতিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যার ফলাফল বাংলাদেশ পাচ্ছে। বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে। অদম্য বাংলাদেশকে, অনন্য বাংলাদেশকে।

 

জাতিসংঘের ৭৭ তম অধিবেশনে তিনি ১৯ বারের মতো মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য রেখেছেন। পিতা মুজিবের রক্তের প্রবাহ, আদর্শের আঙ্গিক, চেতনার ফসল, বিবেকের বিকাশ, দেশপ্রেমের মশাল একজন হাসিনাকে পোক্ত করে তুলেছে, বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। বিশ্বময় তার সৌরভ ছডড়য়ে যাচ্ছে।

 

তিল তিল করে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন। হয়েছেন বিশ্ব বিবেকও। ১৯৭৫ সালের পর বহুমাত্রিক বেদনাবাহিত এই জীবনই আজ এদেশের মানুষের জন্য অহংকার, অলংকার। দেশ গড়ার অনন্য রূপকার শেখ হাসিনা ১৯৮১ খ্রি. দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে অত্যন্ত নির্ভীক ভাবে যথার্থই বলেছিলেন, ‘সাহসিকতা এবং ঝুঁকি এই দুই-ই জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত। প্রকৃতপক্ষে, জীবনের ঝুঁকি নিতে না পারলে এবং মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

 

বাবার অহংকারের রাজনৈতিক জীবন ও স্মৃতি, বাংলাদেশের জন্মের রক্তস্নাত, আলোকিত অধ্যায়, মায়ের স্নেহ ও মমতাময়ী সর্বংসহা অতীত, কঠিন জীবনাচার, রাজনৈতিক ব্যবহারিক পাঠ নিজের অজান্তেই শেখ হাসিনাকে পৃক্ত ও পোক্ত করেছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক করেছে। হয়েছেন সকল বিশ্লেষণের ঊর্ধ্বের নেত্রী। যার ফসল সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ।

 

৭৬ তম জন্মদিনে তিনি বিশ্ব মানবতার কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়।’

 

তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি চেয়েছেন। সংঘাতের পরিবর্তে বন্ধুত্ব ও মৈত্রী চেয়েছেন। স্যাংশনের পরিবর্তে উন্মুক্ত অবাধ বৈশ্বিক ব্যবস্থা চেয়েছেন। বিশ্বে অশান্তি থাকলে তা সকলকে আক্রান্ত করবে। তিনি সকলের সাথে বন্ধুত্ব চেয়েছেন। যেমনটি চেয়েছিলেন ৪৮ বছর আগে জাতিসংঘে প্রথম ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।

 

পিতা মুজিব যেখানে ৪৬ বছর বয়সে আইয়ুব খানের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে শেখ হাসিনাকে ৩৪ বছর বয়সে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বর্বর সময়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশ গঠনে এখন পর্যন্ত তিনি সকল বিশেষণের ঊর্ধ্বে ওঠে এসেছেন। তাইতো শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এখন সর্বজন স্বীকৃত।

 

সকল প্রকার কুপমন্ডুকতা পিছনে ফেলে শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্ব বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ক্রমেই উপরের দিকে উঠে আসছে। অবাক পৃথিবী বিশ্বয় ও বিহ্বলতার মাধ্যম দিয়ে তা তাকিয়ে দেখছে। শত্রুরা মিথ্যে প্রমাণিত হচ্ছে। ৭৪ এ যারা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করেছে, তারা বিনয়ের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে । ১৯৭৫ খ্রি. পর্যন্ত যারা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে হজ্ব করতে অনুমোদন দেয়নি, তারা বিভিন্ন কর্মকা-ে আমাদের সঙ্গী হচ্ছে, সাথী হচ্ছে ,উন্নয়ন অংশীদার হচ্ছে। যে দেশ আমাদের  দেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের ১০ দিন পর। সে দেশ এখন আমাদের অন্যতম অনিবার্য উন্নয়ন অংশীদার।

 

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। অনেকের শাস্তি হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে সচল আছে।

 

দেশে ছয় কোটি তারুণ্যের টগবগে স্বপ্ন বাংলাদেশকে ক্রমেই চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উজ্জ্বল অনুসরণীয় বাস্তবতা। তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বন্ধুহীন দেশ নয়। পৃথিবীর জন্য বোঝা নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য অহংকার। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার উদীয়মান বাঘ।

 

দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বে টগবগে তরুণরা অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী হাতকে শক্তিশালী করছে, উন্নয়ন বহরকে গুরুত্বপূর্ণ করছে। এদের দেশপ্রেমের অনুভূতিকে পরিচর্যা করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের  যথাযথভাবে গড়ে উঠতে হবে।

 

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সততা, ত্যাগ, নির্ভীকতা, শুদ্ধ-শিষ্টাচার, জনগণের প্রতি নিখুঁত- নিবিড়তম ভালোবাসা আমাদের জন্য অহংকার, অলংকার। অহংকারের এই নির্যাসকে ছডড়য়ে দিতে হবে সবখানে, দেশের সর্বত্র।

 

বাংলাদেশের উন্নয়নের অদম্য অনিরুদ্ধ পথচলার নেত্রী, সকল বিশেষণের ঊর্ধ্বের নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিপ্লবীদের প্রসূতি চট্টগ্রামের সকল মানুষের পক্ষে অন্তরের গভীরতম অনুভূতি থেকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সুস্বাগতম। নতুন পথের নতুন দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট