চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে এলাহি কাণ্ড

ইফতেখারুল ইসলাম

৩ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রতিদিন কোন না কোন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রস্তুতি সভায় অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি যেতে হচ্ছে পলোগ্রাউন্ড ময়দানে। প্রতিদিন কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীদের কেউ না কেউ জনসভাস্থল পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। আবার তাদেরকেও সময় দিতে হচ্ছে। এদিকে চলছে মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি। সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখতে চান না তারা।

 

অপরদিকে, চলছে প্রচার-প্রচারণার অঘোষিত প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য নিজেকে দলের নীতি নির্ধারকদের সামনে তুলে ধরতে পদ প্রত্যাশীদের এই প্রতিযোগিতা। রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড ময়দানের আশপাশের প্রতিটি দেয়াল, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে যেখানে ব্যানার পোস্টার লাগানো সম্ভব কোথাও আর খালি জায়গা নেই। ফ্লাইওভারের সড়কবাতির খুঁটিতে লাগানো হয়েছে তিন থেকে চার স্তরের ব্যানার-ফেস্টুন।

 

ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার মাঝে চট্টগ্রামের এই জনসভা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। সমাবেশস্থলের চারপাশ এবং শহরের প্রধান সড়ক বিশেষ করে সিডিএ এভেনিউ ও ফ্লাইওভারে রঙিন ব্যানার পোস্টার লাগানো হয়েছে অনেকটা প্রতিযোগিতা করে। বিভিন্ন উপজেলা সদরেও এই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে এই জনসভাকে ঘিরে। চট্টগ্রামে এ যেন এক এলাহী কাণ্ড।

 

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতাকর্মীরা যেন যে যার অবস্থান থেকে নিজ এলাকায় প্রচারণা চালায়। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ৪ ডিসেম্বর বাস্তবায়নের পালা।

 

উপজেলা, শহর ও জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লেখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। মূল সংগঠন কিংবা সহযোগী, পদ আছে কিংবা পদ নেই, সবাই পোস্টার-ব্যানারে বড় বড় ছবি দিয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা কতটুকু সমাবেশ সফল করার আর কতুটুক আত্মপ্রচার তা নিয়েও কেউ কেউ মুচকি হাসেন। কোনটিতে বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কোনোটিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন, কোথাও আবার স্থানীয় এমপি, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ছবি বড় করে শোভা পাচ্ছে। আবার কিছু পোস্টার-ব্যানারে নেতার ছবির চেয়ে বড় হয়ে গেছে প্রচারকারীর নিজের ছবি। এসব ব্যানার পোস্টারের মাধ্যমে কে কোন নেতার অনুসারী তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে।

 

গত ৩০ মে নগর যুবলীগের সম্মেলন হলেও এখনো কমিটি হয়নি। উত্তর জেলায়ও একই চিত্র। পদপ্রত্যাশীরা ভাবছেন, জনসভা সফল করতে যারা বেশি ভূমিকা রাখবেন, তারাই এগিয়ে থাকবেন। গত ২৯ নভেম্বর জনসভার প্রস্তুতি উপলক্ষে মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ যুবলীগের সভায় কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ পদ প্রত্যাশীদের প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন।

 

মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী এম আর আজিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক দিয়েছেন। তাই দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রামবাসী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তাকে সেই সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য।

 

উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী আবুল বশর বলেন, ১০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসছেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবেই তারা কাজ করছেন উল্লেখ করে বলেন, সারা চট্টগ্রামে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে ডিসেম্বরেই মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেও তাই নিজেকে প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা চলছে।

 

এদিকে, শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে প্রস্তুতি থেমে নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শহরের বিভিন্ন সড়কের সংস্কার, আবর্জনা পরিষ্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, আলোকায়ন ইত্যাদি কাজ গুরুত্ব সহকারে করছে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট