চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কর্ণফুলী উপজেলা থেকে যাওয়া পিকনিক বাসের ১৫ যাত্রী আহত

মেহেদির রং মোছার আগেই বাসের চাকায় পিষ্ট নবদম্পতি

চারজন চমেক হাসপাতালে ভর্তি

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৮ আগস্ট, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

ঈদের এক সপ্তাহ আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথীর সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঈদ উৎসব পালন। তারপর হানিমুন। এর সঙ্গে সিলেটে মাজার জিয়ারত। আনন্দ, হানিমুন, জিয়ারত হলেও বাড়ি ফেরা হয়নি এই দম্পতির। পথেই বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে চলে গেলেন তারা না ফেরার দেশে।

মেহেদির রং এখনও মোছেনি। যায়নি বিয়ে বাড়ির ধুম। এরই মধ্যে নবদম্পতিসহ ৪ জনের মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ নিহতের পরিবার। স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর নিহতের স্বজন। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেট থেকে ফেরার পথে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কারারচর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীসহ ৪ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও ৪ জন। মুমূর্ষু অবস্থায় আহত ৪ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন প্রাইভেটকারের যাত্রী ঢাকার মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী (২৬), তার স্বামী ইমরান হোসেন (৩৫), বান্ধবী জান্নাত রাইসা (২৫) ও বন্ধু আকিবুল হাসান (২৭)। নিহত সাদিয়া আক্তার সাথী বগুড়া জেলার মোশাররফ হোসেনের মেয়ে। এবং তার স্বামী ইকরাম নোয়াখালীর আবু হানিফের ছেলে। তিনি ঢাকায় ডেকোরেটর ব্যবসা করতেন।

নগরীর কর্ণফুলী উপজেলা থেকে সিলেটগামী যাত্রীবাহী পিকনিক বাসটি রওয়ানা দিয়েছিল। প্রাইভেট কারের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় কারের চার যাত্রী নিহত ছাড়াও আহত হয়েছেন বাসের ১৫ যাত্রী। গুরুতর আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও আহত যাত্রীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার থেকে স্থানীয়দের উদ্যোগে শ্যামলী পরিবহনের বাসে করে একটি দল খুলনা, বাগেরহাট ও সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ফিরতি পথে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিয়ের পর মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া হানিমুন করতে সিলেট গিয়েছিলেন। হানিমুন ও মাজার জিয়ারত শেষে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেটকারযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে শিবপুরের কারারচর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক হতে আসা একটি যাত্রীবাহী পরিবহন বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এসময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারে থাকা নবদম্পতিসহ ৩ যাত্রী মারা যায়।

খবর পেয়ে ইটাখোল হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস নরসিংদী ও শিবপুরের ৪টি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহতাবস্থায় বাস ও প্রাইভেটকারের আরও ৫ যাত্রীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যায়। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর শুনে সকালে জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজনরা। নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাথী আক্তারের মা রহিমা বেগম বলেন, মাত্র ১০ দিন আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। হাতের মেহেদি রং এখনো মুছেনি। এর আগেই দুর্ঘটনা আমার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। আমি এখন বাঁচবো কি করে?

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা দুর্ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা প্রাইভেটকারে তিনজনকে আটকা অবস্থা দেখতে পাই। তাদের উদ্ধার করলে দেখা যায় তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রাইভেটকারটি ওভারটেকিং করতে গিয়ে বাসের সাথে লেগে যায় এবং গাড়িটি ঘুরে যায়। তখন বাসটি একদম প্রাইভেটকারের উপর দিয়ে চলে যায় এবং খাদে পড়ে যায়। এতে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

ইটাখোলা হাইওয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, মূলত বেপরোয়া গতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট