চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগরীর ১১ ওয়ার্ড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ নভেম্বর, ২০২২ | ২:১৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর আপদকালীন পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও ইপসার আয়োজনে এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় ‘জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস, অগ্নিকা- এবং ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আপদকালীন পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ‘মাল্টিহ্যাজার্ড কন্টিনজেন্সে প্ল্যান’ এর আলোচনা গতকাল (রবিবার) চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন নগরবিদ, কাউন্সিলর এবং বিশেষজ্ঞরা। প্রধান অতিথি চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আজকের সভায় আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। আলোচকরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। চট্টগ্রামে ভূমিধস উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেন, দুর্যোগভিত্তিক পরিকল্পনা আরও সুনির্দিষ্ট হতে পারে এবং যে প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে তাতে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

চসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমরের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি এবং সমস্ত সরকারি স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যে কোনও দুর্যোগের জন্য সারাবছর প্রস্তুত থাকা উচিত। নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, নাগরিক চাপ কাটিয়ে উঠতে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই নগরকে সাজাতে হবে। ভূমিধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় যখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুুঁকিপূর্ণদের আশ্রয়স্থলে স্থানান্তর করতে চায়, তখন আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলি সমাধান করা উচিত। জলাধারগুলি রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। 

 

কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, জলাবদ্ধতা কেন হয় তার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। খোলা নালায় সবাই আবর্জনা ফেলে। বড় নালার উপর নেটা বসানো যেতে পারে। ছোট নালায় স্ল্যাব এমনভাবে বসাতে হবে যাতে তা এক বা দুইজন সেবক তুলতে পারে। কারণ বড় স্ল্যাব তোলার জন্য ক্রেনের প্রয়োজন হয়।  সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী বলেন, মূল স্তর থেকে দুর্বলতা চিহ্নিত করা এই পরিকল্পনায় যোগ করা উচিত। দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে নারী নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা পরিকল্পনায় যোগ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারি বলেন, এখানে যে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে তাতে সেকেন্ডারি তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। সিডিএ একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে। যেখানে সবকিছু আরো সুচারুভাবে থাকবে। তবে যেসব বিষয় এখানে এসেছে তা চসিকের গ্রহণ করা উচিত। যদিও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে সিডিএ। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করবে সব সংস্থা।

 

কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ঝুঁকি ও বিপদের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

 

নগরবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য চসিকের বিদ্যমান পরিকল্পনা কী? তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা ও পরামর্শ আসতে হবে। আমরা এই শহরের সঠিক জনসংখ্যাও জানি না। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব এখানে উল্লেখ করা হয়নি। পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, যানজট, ড্রেনে পড়ে শিশুর মৃত্যু, উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের পরিবহন সুবিধা কোথায় এসব প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনায় তার সমাধানের বিষয়ে সুপারিশ করার পরামর্শ দেন।  গবেষণার প্রধান পরামর্শক চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক তার উপস্থাপনায় বলেন, নগরীর ১১ টি ওয়ার্ড ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ওয়ার্ডসমূহ হল, ১,২,৩,৭,৮,৯,১৩,১৪,১৫,১৬ এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ড। ৩০ হাজার ৭৮৬ জন এবং ২৭৭১ শিশু ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবিষ্যতে ভূমিধ্বস হলে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ধসে পড়া কাঠামোর ভিতরে আটকা পড়বে যার ১০ শতাংশ অবিলম্বে মারা যাবে এবং ৪৬২৫টি ভবন এবং অবকাঠামো ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।

 

অপরদিকে, রিকটার স্কেলে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরীর প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৩টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা চট্টগ্রাম শহরের মোট ভবনের প্রায় ৯৩ শতাংশ। ৮, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ভূমিকম্পের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বন্দর নগরীর ১৩ দশমিক ৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রত্যক্ষ এবং ৫২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পরোক্ষ জলাবদ্ধতা ঝুঁকিতে আছে। গত ৫৩ বছরে শহরের ৭০ শতাংশ খাল বিলীন হয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে নগরী গড়ে তোলায় আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, মোহরা, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইসহ নিম্নাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।  প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অগ্নিকা-ের বিপর্যয় ঝুঁকি : নগরীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ৯৭ শতাংশ আগুনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের অগ্নিনিরাপত্তা অনাপত্তিপত্র এবং ৯৭ শতাংশের ছাড়পত্র নেই।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর পূর্বকোণকে বলেন, এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা। চসিকের অনুমতি নিয়ে এনজিও সংস্থা কাজটি করছে। আজ (গতকাল) কিছু সুপারিশ উঠে এসেছে। আরো আলোচনা হবে। তারপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট