চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ধরন দেখে টাকা নেন রেজিস্ট্রার

ইমাম হোসাইন রাজু

২৮ নভেম্বর, ২০২২ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

‘আপনার উকিল যেভাবে চাইবে আমি সেভাবে সার্টিফিকেট দেব। উকিল যদি বলে এটেম্পট টু মার্ডার, তাহলে এক রকম সার্টিফিকেট, আর মার্ডার বললে আরেক রকম। এখন ২ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে উকিল যদি স্পেশাল কিছু চায় সেক্ষেত্রে টাকা আরও লাগবে। আমাকে যদি মিথ্যা কথা বলাতে হয়, সেক্ষেত্রে টাকাতো লাগবেই। উনি (উকিল) যদি বলে ৩২৬ ধারার জন্য, তাহলে এক রকম। যদি বলে ৩২৫ ধারার জন্য, তাহলে আরেক রকম। উকিল কী ধরনের সার্টিফিকেট চায়, সেটির উপর নির্ভর হবে। এখন আপনাকে ২ হাজার টাকা খরচ করতেই হবে। আদারওয়াইজ যতো এসআই-ই আসুক বা অন্য কেউ আসুক কোনো কাজ হবে না।’

এসব কথা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়েলিটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. ইয়াছিন আরাফাতের। যার বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে ‘সত্যকে মিথ্যা’ ও ‘মিথ্যাকে সত্য’ বানানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি টাকা ছাড়া সার্টিফিকেট প্রদান করা থেকেও বিরত থাকার অভিযোগ এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ‘বিকাশ’ এবং ‘নগদের’ মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করেন তিনি। এ কাজে ব্যবহার করেন নিজের স্ত্রীকেও। এ সংক্রান্ত অডিও-ভিডিওসহ বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, মারামারিসহ দুর্ঘটনায় আহত সিংহভাগ রোগীই ভর্তি হয়ে থাকেন চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে। এসব রোগীর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রয়োজন হয় চিকিৎসকের মেডিকেল সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেট দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন আলোচ্য বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার।

অভিযোগ রয়েছে, সার্টিফিকেট প্রদানের নামে ভুক্তভোগীদের ডেকে এনে টাকা চাওয়াই যেনো নেশা হয়ে ওঠেছে ক্যাজুয়েলিটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইয়াছিনের। এসব টাকা তিনি গ্রহণ করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ‘বিকাশ ও নগদ’ নম্বর দিয়ে ভুক্তভোগীদের টাকা পাঠাতে বলেন এ চিকিৎসক। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করেন নিজ স্ত্রীর বিকাশ নম্বরও।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি প্রতিপক্ষের হাতে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে ক্যাজুয়েলিটি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া সজীবের (ছদ্মনাম) মেডিকেল সার্টিফিকেট গ্রহণের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রফিক (ছদ্মনাম)। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাকে সার্টিফিকেট প্রদান না করে ভুক্তভোগীকে দেখা করার কথা বলেন ডা. ইয়াছিন। সর্বশেষ ভুক্তভোগী সজীব (ছদ্মনাম) চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করলে সার্টিফিকেটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন বলে জানান ওই ভুক্তভোগী।

সজীবের মতো নগরীর আরেকটি থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এক এসআইয়ের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠান ডা. ইয়াছিন। ক্ষুদে বার্তায় তিনি ভুক্তভোগীকে নিজ ওয়ার্ডে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন। একটি অডিওতে শোনা যায়, এক ভুক্তভোগী নিজের কাছে মাত্র এক হাজার টাকা আছে উল্লেখ করেন। ডা. ইয়াছিন সেই এক হাজার টাকা তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠাতে পরামর্শ দেন।

অপর এক ভুক্তভোগীর স্লিপে লেখা ডা. ইয়াছিনের বিকাশ নম্বরে কল দেওয়া হলে নিজেকে ডা. ইয়াছিনের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন সাজিয়া শারমিন নামে এক নারী। নম্বরটিতে বিকাশ আছে কিনা, জানতে চাইলে তাতেও তিনি হ্যাঁ সূচক জাবাব দেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে আর হবে না। আপনি আমার ওয়ার্ডে আসেন। এসে দেখা করেন। আপনার পরামর্শ মনে থাকবে। আর কখনো এমন হবে না।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ডাক্তার সমাজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য খুবই বিব্রতকর। দু’একজনের জন্য পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা চাই না। কোনোভাবেই জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত করে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট