চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কি ছিল ‘চোরের’ মনে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা রাত ১টা ৩৫ মিনিট। ভবনের দোতলার বারান্দার গ্রিল কেটে প্রবেশ করেন মুখোশপরা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে যুক্ত হন আরেক যুবক। ভোর রাত তিনটা পর্যন্ত ভবনের ভেতর অবস্থান করলেও খালি হাতেই ফিরে যান দু’জন। তবে তছনছ করে যান গুরুত্বপূর্ণ ফাইলসহ বিভিন্ন আসবাব-সরঞ্জাম। রহস্যজনক এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এলাইড সাইন্সেস ভবনে।

 

প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে চুরি হিসেবে দেখলেও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন অন্য কোন উদ্দেশ্যেই এসেছিল ‘চোরের দল’। যদিও ‘সুরক্ষিত’ এলাকায় ‘রহস্যজনক’ এমন ঘটনায় ভেতরের কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে খোয়া গেছে মাত্র আট হাজার টাকা। তবে চিকিৎসা সেবায় কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে জানান প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।

 

জানা যায়, গত বুধবার মধ্যরাত ১টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ৩টার মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউটে এ চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি করে পালানোর সময় প্রতিষ্ঠানের এক নিরাপত্তা কর্মী টের পেয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করলেও দুই চোরই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে ইনস্টিটিউটের ল্যাব ও একাউন্টস অফিস চারটি কক্ষ তছনছ অবস্থায় দেখতে পান।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ও সিআইডির দুটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

 

এসময় তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং ফিঙ্গার প্রিন্টসহ বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করেন সিআইডির টিম। আর পুলিশ বলছে, চুরির ঘটনায় অভ্যন্তরীণ কোন বিষয় জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছেন।

 

ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এলাইড সাইন্সেসের পরিচালক ডা. পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘গভীর রাতে জানালার গ্রিল কেটে মুখোশ পরা দুই যুবক প্রবেশ করে। একজনের মুখোশ পরে গেলে তার চেহারা দেখা গেলেও তাকে চেনা যায়নি। তারা প্রথমে হিসাব শাখা, প্রশাসনিক বিভাগ ও ল্যাবসহ চারটি কক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্ন ফাইল ও সরঞ্জাম তছনছ করে। হিসাব শাখার ড্রয়ারে থাকা প্রায় আট হাজার টাকা নিয়ে গেলেও কক্ষগুলোর ফাইলপত্র তছনছ করে ফেলে।’

 

এদিকে, এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা দেবপ্রিয় বড়ুয়া বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ইনস্টিটিউটের চিফ মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইনকে। কমিটিতে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এলাইড সাইন্সেসের পরিচালক ডা. পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে তা অদূরে পাওয়া যায়। তারা আসলে কেন এখানে প্রবেশ করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা আমাদের ভাবাচ্ছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’

 

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিকভাবে দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’

 

বাইরে থেকে এসে চুরি করার সম্ভাবনা কম উল্লেখ করে ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার আরও বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে তারা দু’জনই স্মার্ট। তাদের আচরণ দেখে মনে হয়নি তারা চুরি করতে এসেছে। চুরির উদ্দেশ্যে এলে ল্যাপটপ ফেলে যেতো না। কিংবা ফাইল তছনছ করতো না। ধারণা করা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা থাকতে পারে। তবে সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট