চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন আঙ্গিকে বিলাসবহুল প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিলাসবহুল প্রমোদতরী এমভি বে-ওয়ান নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করছে। পর্যটকবাহী এই জাহাজটি আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে নিয়মিত চলাচল করবে। তবে আপতত যাত্রী কম থাকায় ও জাহাজটির বিপুল অংকের খরচ সাশ্রয় করতে সপ্তাহে একদিন যাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনালে অবস্থানরত এমভি বে ওয়ানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ এ তথ্য জানান।

 

তিনি আরো বলেন, পাঁচ তারকামানের সাততলার এই প্রমোদতরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ছাড়বে। পরদিন শুক্রবার ভোরে সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে এবং একদিন দু’রাত পর শনিবার সকাল ১০টায় সেন্টমার্টিন থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ফিরবে।

 

এদিকে যাত্রীসেবার বিবেচনায় জাহাজটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোসহ যাতায়াত ভাড়াও বিগত মৌসুমগুলোর তুলনায় কিছুটা কমানো হয়েছে। জাহাজটির ইকোনোমি ক্লাস চেয়ারের ভাড়া রাউন্ড ট্রিপ ৫ হাজার থেকে কমিয়ে সাড়ে ৪ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২ হাজার ৮শ থেকে কমিয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বিজনেস ক্লাস চেয়ার রাউন্ড ট্রিপ ৭ হাজার থেকে কমিয়ে ৬ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ৩ হাজার ৭শ থেকে কমিয়ে ৩ হাজর ৩শ টাকা করা হয়েছে। ওপেন ডেক রাউন্ড ট্রিপ সাড়ে ৭ হাজারের স্থলে ৬ হাজার ৩শ টাকা এবং ওয়ানওয়ে ৪ হাজার ৫শ এর স্থলে সাড়ে ৩ হাজর টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বাংকার বেড রাউন্ড ট্রিপ ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ৫ হাজার থেকে ৩ হাজার ৭শ টাকা করা হয়েছে।

 

ফ্যামিলি বাংকার বেড রাউন্ডট্রিপ ৩৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ১৯ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভিভিআইপি প্রেসিডেনসিয়াল কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৩৮ হাজার থেকে ৩২ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২০ হাজার থেকে সাড়ে ১৭ টাকা করা হয়েছে। রয়েল কেবিন ৪০ হাজার থেকে ৩৪ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২৩ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

অন্যদিকে ভিভিআইপি প্রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যাস কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৪৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২৫ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইভাবে কমেছে ভিভিআইপি কেবিনের রাউন্ড ট্রিপ ওয়ানওয়ের ভাড়া। বেলকনিসহ এটাচ বাথ সুবিধার দ্য এমপেররস কেবিন রাউন্ডট্রিপ ৫০ হাজার থেকে কমিয়ে ৪৫ হাজার এবং ওয়ানওয়ে ২৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ বলেন, ‘পতেঙ্গা থেকে বে-ওয়ান ছাড়াও কক্সবাজার থেকেও এ কোম্পানির ‘এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘এমভি বারো আওলিয়া’য় করে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়া-আসা করতে পারবেন। ক্রুজে বসে সাগরের বুক থেকে গোটা প্রবালদ্বীপ, ছেঁড়াদ্বীপ ও নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দেখারও ব্যবস্থা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ভাড়া কিছুটা কমানো হয়েছে। বিনোদনের জন্য নামানো এ জাহাজের চলাচল যাতে বন্ধ করে দিতে না হয়, সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। কারণ শুরু থেকে লসের মধ্যে চালাতে হচ্ছে বে-ওয়ান ক্রুজটি।’ এছাড়া কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স শীঘ্রই হাজিদের সৌদি আরবে নিয়ে যেতে নতুন একটি জাহাজ যুক্ত করার কথা জানান ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ।

 

৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সাততলা বিলাসবহুল এই প্রমোদতরী সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন সুবিধা সম্বলিত। ১৮শ আসনের জাহাজটিতে সাধারণ চেয়ার থেকে বিলাসবহুল কেবিন, সিভিউ ও রুফটপ বাফেট রেস্তোরাঁসহ একাধিক ট্রেডিশনাল রেস্তোরাঁ, আইসক্রিম ও কফিবার, ব্রান্ড শপ সবই আছে। জাহাজ পরিচালনা ও পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য এতে ১০০ এর বেশি নাবিক রয়েছেন। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে হয় বলে আন্তর্জাতিকমানের নৌনিরাপত্তা সম্বলিত এই জাহাজে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য রয়েছে লাইফ জ্যাকেট ও জীবনতরীসহ যাবতীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। বিশেষ করে সাগরে ঢেউ হলে জাহাজের তলদেশে থাকা দু’পাশে দুটি পাখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে ঢেউয়ের মুখেও জাহাজ দুলতে থাকে না।

 

সড়ক পথে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ, সেখান থেকে নৌপথে সেন্টমার্টিন যেতে হত। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটারের যাত্রাপথে ছিল নানা ঝক্কি। সাগর পথে ২৩৬ কিলোমিটার দূরে সেন্টমার্টিন যেতে সেই ঝক্কি এখন আর নেই। বরং বাড়তি পাওনা নদী সাগরের বিচিত্র রূপ আর মুগ্ধতা। নদীর নাব্যতাসহ বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করে দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ২০২০ সালে কর্ণফুলী ক্রুজলাইনের অধীনে শুরু করে জাহাজ চলাচল। যা ছিল পর্যটক ও দ্বীপবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট