চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১২ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৮%

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৪ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

২০১০ সালে চট্টগ্রাম জেলায় আমনের আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৭৮ হাজার জমিতে। ধান উৎপাদন ছিল চার লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২২ সালে চাষ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে। তবে গত তিন মৌসুমে প্রায় এক লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল। আবার আবাদ কমে এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টরেও নেমে এসেছিল। এভাবে আবাদের সূচক উঠা-নামায় রয়েছে।

 

তবে উৎপাদন এবার ৫ লাখ মে. টন ছাড়িয়েছে। গত এক যুগে আমনের ক্ষেত্র বড় না হলেও উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বীজ-সারের সহজলভ্যতা ও উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনের কারণে উৎপাদন বাড়ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ধানি জমি ও খাল-জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠছে বাড়িঘর ও শিল্প-কারখানা। নগরায়নের কারণে প্রতিবছর এক শতাংশ করে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্থানীয় জাতের পরিবর্তে এখন নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবনে ফলন বাড়ছে। কৃষি গবেষণায় স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল থেকে হাইব্রিড জাতের বীজ উদ্ভাবন করেছে। ব্রি-১১ থেকে এখন বন্যা ও লবণ সহনশীল জাতের বীজ অবমুক্ত করা হয়েছে। ভালো ফলন দিচ্ছে এসব জাত। তারপরও গবেষণা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ফল সমানভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সব জায়গায় সমানভাবে ফলন পাওয়া গেলে উৎপাদন সূচক আরও বাড়বে।’

 

কৃষকেরা জানান, সার-বীজ ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, সেচ সংকট, শ্রমিকের বাড়তি মজুরি ও কৃষি উপকরণে উচ্চমূল্যের কারণে কৃষি কাজের খরচ আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এছাড়াও রয়েছে বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাড়তি চিন্তা। এসব কারণে চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ কমছে কৃষকের। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে কৃষি জমি ভরাট করে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছর ধরে চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনকভাবে ধানি জমি কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নগর ও নগরীর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপকভাবে আবাদযোগ্য জমি কমছে। এসব এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নে কৃৃষি জমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে।

 

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) প্রতিবেদনে বলছে, দেশে বিভাগওয়ারি কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি। এ বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর আশপাশের উপজেলায় দ্রুত নগরায়নে খাল-বিল ভরাট করে বাড়ি-ঘর ও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে শহর লাগোয়া উপজেলা বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারীতে কৃষি জমি আশঙ্কাজনক হারে অকৃষিতে চলে যাচ্ছে।

 

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি জমির আকার বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই উন্নতজাতের বীজ ব্যবহারে ফলন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।’ কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১০-২০১১ মৌসুমে আমন চাষ হয়েছিল এক লাখ ৭৮ হাজার জমিতে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যার মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে আমন চাষ। তবে ২০১৫ সালে এসে আবাদ কমে এক লাখ ৭০ হাজার ৫শ হেক্টরে নেমে এসেছিল। এরপর তিন বছর এক লাখ ৮২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হয়েছিল।

 

কিন্তু চলতি মৌসুমে আবাদের ক্ষেত্র কমে ফের এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৭ হেক্টরে নেমে এসেছে। কিন্তু ধান উৎপাদনের সূচক ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৪ সালে উৎপাদন ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যেও উঠা-নামায় রয়েছে উৎপাদন সূচক।

 

কৃষি বিভাগ জানায়, আগে ধানের গড় উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি দুই টন। বর্তমানে হাইব্রিড ধানে ফলন হচ্ছে চার টনের কাছাকাছি। বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতে হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৫ থেকে ৬ টনের বেশি পরিমাণ ধানের ফলন হচ্ছে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট