চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুধু দুই আসামি নয়, ছিনিয়ে নিয়েছে ওয়াকিটকি-মোবাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুই আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১৪ জনকে এজাহারভুক্ত ও ২১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামি এখনও ধরা পড়েনি। গত শনিবার সন্ধ্যায় কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে সিনেমা স্টাইলে হামলা চালিয়ে দুই আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ফাঁড়ির চারতলার হাজতখানা থেকে আবু হানিফ ও মহিউদ্দিন শরীফ নামে ওই দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় তার অনুসারীরা। শুধু আসামি নয়, দুষ্কৃতিকারীরা ছিনতাই করে পুলিশের ওয়াকিটকি, মুঠোফোন। ভাঙচুর চালায় পুলিশ ফাঁড়িতে।

 

ওই ঘটনায় পলাতক আসামি হানিফের বোন নাজমা আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। হামলার সময় পুলিশ অনেকটা অসহায় ছিল। পুলিশের দাবি, অজ্ঞাতনামা আসামির ছোড়া গুলিতে নাজমা মারা গেছে। তবে নাজমার মা নুনু বেগমের দাবি, পুলিশের এসআই রোকনুজ্জামানের ছোড়া গুলিতে মারা গেছে নাজমা। গত শনিবার সন্ধ্যায় কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুই আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হানিফ ও মহিউদ্দিনের কাছে ৫ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। সে জন্য তাদের আটক করা হয়।

 

পুলিশ বাদী হয়ে দুই মামলা : ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরীফ রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে শনিবার রাতে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৪ জনকে এজাহারভুক্ত ও ২১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামি মো. আবু হানিফ (২৬) ও মহিউদ্দিন শরীফ (১৯) ধরা পড়েনি।

 

মামলায় পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, ফাঁড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর, সরকারি ওয়াকিটকি, মোবাইল ফোন ছিনতাই, অজ্ঞাত ব্যক্তির গুলিতে নাজমা নামে এক মহিলার মৃত্যু ও পুলিশ হেফাজত থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া হানিফ ও মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালুরঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে আবু হানিফ ও মহিউদ্দিন শরীফ নামে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছে থাকা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে তিন হাজার ও একটি জ্যামিতি বক্সের ভেতর থেকে দুই হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। এরপর দুইজনকে কালুরঘাট ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ।

 

ফাঁড়ির ইনচার্জ রোকনুজ্জামানের দাবি, দুইজনকে চারতলায় হাজতখানায় রাখা হয়। আটকের একঘণ্টা পর রাত আনুমানিক ৮টায় হানিফ ও মহিউদ্দিনের অনুসারী প্রায় ২’শ থেকে আড়াইশো নারী পুরুষ ফাঁড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে ফাঁড়ির মূল দরজা ও অফিসের গ্লাস ভাঙচুর করে তারা ফাঁড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা ঢুকেই কনস্টেবল আবদুল্লাহ ও রিয়াদকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। ফাঁড়ির ইনচার্জ রোকনুজ্জামানের কাছ থেকে ওয়াকিটকি ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়।

 

তারা কনস্টেবল আনিসুল মোস্তফার কাছ থেকে চাবি কেড়ে নিয়ে চারতলায় হাজতখানা থেকে হানিফ ও মহিউদ্দিনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কনস্টেবল মোস্তফা তার কাছে থাকা চাইনিজ রাইফেল থেকে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় ৮জনকে আটক করলেও ছিনিয়ে নেওয়া দুইজনকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

এজাহারে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের মধ্য থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার পর পুলিশ জানতে পারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ছোড়া গুলিতে হানিফের বোন নাজমা মারা যায়।

 

গ্রেপ্তার ৮ : চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (ওসি) মাইনুর রহমান জানান, হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে হানিফ ও মহিউদ্দিনকে ধরতে পারেননি তারা। গ্রেপ্তারকৃতরা হল, রাব্বি ইসলাম রবিন প্রকাশ মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম ওরফে সুন্দরী হিজড়া (২০), বাদশা প্রকাশ ববিতা হিজড়া (১৮), আবদুল জলিল (২০), রোহিঙ্গা শরণার্থী দিল মোহাম্মদ (১৮), আবদুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার (আঁখি) ও মো. ইব্রাহিম (২৮)।

 

ওসি মাইনুর বলেন, হানিফের বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় চারটি মামলা রয়েছে। সে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। ফাঁড়িতে হামলার অপরাধ ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুইজনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট