চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুরগির মমতায় সরালি’র ছানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০০ পূর্বাহ্ণ

পুকুর পাড়ে লম্বা লম্বা ঘাস। রয়েছে লজ্জাবতী গাছও। এই লজ্জাবতীর মাঝে চারটি ডিম পেড়ে তাতে তা দিচ্ছিল একটি মা সরালি হাঁস। পুকুরটি ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম সিরাজুল ইসলামের। গত ২৬ জুলাই বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ে ডিমগুলির দিকে চোখ পড়ে পুকুরে জাল দিতে আসা জেলেদের। জেলেরা ডিমগুলি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দেন চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম (মাসুদ)। কিন্তু জেলেরা দমবার পাত্র নয়। তারা এক পর্যায়ে তাকে এসব সাপের ডিম বলে ভয় দেখায়। ডিমগুলি খাওয়ার জন্য জেলেদের নাছোরবান্দা মনোভাব দেখে তিনি ডিমগুলি বাড়ি নিয়ে গিয়ে তা দেয়ার জন্য মুরগির খাঁচায় দেন। জেলেরা হতাশ হয়ে চলে যায়। এরপর ওই হাঁসটি আরো আটটি ডিম পাড়ে। এবার ডিম সমেত হাঁসটি খাওয়ার লোভ জন্মে শ্রমিকদের। সন্ধ্যার পর মা হাঁসটি যখন ডিমে তা দিচ্ছিল শ্রমিকরা হাঁসটি ধরে জবাই করে রাতেই রান্না করে খেয়ে ফেলে। পরদিন খাওয়ার জন্য ডিমগুলি রেখে দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে ডিমগুলি উদ্ধার করে একই মুরগিকে দিয়ে তা দেন। গত ১০ আগস্ট ৮টি বাচ্চা ফুটেছে। মুরগিটি নিজের ডিম

থেকে আরো ছয়টি বাচ্চা ফুটিয়েছে। মুরগির বাচ্চাগুলির সাথে সরালির ছানাগুলিও পরম মমতায় প্রতিপালন করছে মুরগিটি। নিজের বাচ্চা এবং সরালি হাঁসের বাচ্চাগুলি নিয়ে সারা উঠান ঘুরে বেড়ায়। তবে এখানেও শত্রুর অভাব নেই। জন্মের দ্বিতীয় দিন মা মুরগিটি যখন বাড়ির উঠানে বাচ্চাগুলিকে নিয়ে হাঁটছিল। তখন কাক হানা দিয়ে হাঁসের একটি ছানা নিয়ে যায়। এখন বাকি ছানাগুলির যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সতর্ক নজর রাখছেন পরিবারের সবাই। ফরহাদুল ইসলাম জানান, বন্য হাঁসগুলি রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পৃথিবীতে কোন প্রাণিই গুরুত্বহীন নয়। পরিবেশ রক্ষায় বন্য পাখিদের রক্ষা করতে হবে। তাই তিনি বিবেকের তাড়নায় ডিমগুলি উদ্ধার করে নিজের বাড়ির মুরগি দিয়ে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে তিনি সফল হয়েছেন। তবে মা হাঁসটি রক্ষা করতে না পারায় তিনি আফসোস করছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, সবাই সচেতন হলে আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি। হাঁসের ছানাগুলি প্রাপ্তবয়স্ক হলে হয়তো স্থায়ীভাবে বনে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যদি না যায়, তখন এগুলো সংরক্ষিত কোনো বনাঞ্চলে অবমুক্ত করার ইচ্ছা আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া পূর্বকোণকে বলেন, হাঁস প্রজাতির সরালি পরিযায়ী স্বভাবের। জলাভূমিতে এদের বিচরণ হলেও প্রজননকালে এরা জঙ্গলে বা টিলার চূড়ায় বাসা করে ডিম পাড়ে। একসময় প্রচুর পরিমাণে এদের দেখা মিলত। আবাসস্থলের অভাব এবং শিকারের কারণে এরা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই এই প্রাণি ঝুঁকিতে আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ধরনের বন্য প্রাণিগুলি আমাদের রক্ষা করা জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট