চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছাগল চুরির অপবাদ পুরুষাঙ্গে লোহার শিক ঢুকিয়ে নির্যাতন বোয়ালখালীতে

সেকান্দর আলম বাবর , বোয়ালখালী

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০০ পূর্বাহ্ণ

ছাগল চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পুরুষাঙ্গে গরম লোহার শিক ঢুকিয়ে মো. আশিক (২৪) নামের এক যুবককে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বোয়ালখালীতে। গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার এঘটনা ঘটলেও প্রভাবশালী অত্যাচারীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি নির্যাতনের শিকার আশিকের পরিবার। গতকাল শুক্রবার খবরটি স্থানীয়রা জানলে তাদের সহযোগিতায় এব্যাপারে একইদিন বিকেলে বোয়ালখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আশিকের পিতা হতদরিদ্র দিনমজুর আবুল কালাম।
আশিক বোয়ালখালী পৌরসভার গোমদন্ডী মুজাহিদ চৌধুরী পাড়ার নকীব আলী চৌধুরী বাড়ির আবুল কালামের ছেলে। গত ৪দিন যাবৎ নিজ

বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রয়েছেন যন্ত্রণা বুকে নিয়ে। বিচারের বাণি প্রকাশের যেন সুযোগ তাদের নেই। ২ভাই ৩বোনের সংসারে নির্যাতনের শিকার আশিক মেঝ। সে স্থানীয় রড সিমেন্টের দোকানে কুলি শ্রমিকের কাজ করে।
আশিকের পিতা আবুল কালাম পূর্বকোণকে জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরের খাবারের রান্নার জন্য দোকান থেকে ডিম কিনতে যান তার ছেলে আশিক। এসময় স্থানীয় তিনজন যুবক দুইটি ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে অলিবেকারী চাইলদ্যাতল এলাকা থেকে আশিককে অটোরিকশায় তুলে পৌরসদরের রেল লাইনের পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। তারপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। প্রথমে আশিককে মারধর করতে থাকে। এক পযৃায়ে তারা লোহার শিক আগুনে গরম করে পুরুষাঙ্গের ছিদ্রপথে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় আশিকের সাথে থাকা ডিম সিদ্ধ করে পায়ুপথে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এতে একপর্যায়ে আশিক অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় আশিককে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়াতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পর্যন্ত নিয়ে গেলে আশিকের জ্ঞান ফিরে আসায় ভর্তি না করিয়ে ফের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। তিনি আরো জানান, পরবর্তীতে স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে চিকিৎসা বাবদ ২০হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয় তারা। এরএক পর্যায়ে আশিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারাও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। উপায়ন্তর না দেখে হাসপাতালের ইউরোলজী বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রাইভেট চিকিৎসা করানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে ছাগল দুটি চুরি হয়েছে বলে এ নির্যাতন চালানো হয় সেই ছাগল দুটি উপজেলার একটি বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যার কাছে এ ছাগল দুটি পাওয়া গেছে তাতে ঘুর্ণাক্ষরেও আশিকের নাম আসেনি। উদ্ধার কার্যক্রমে পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর সহযোগিতা করেছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে জুমার নামাজের পর এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে আশিককে ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে বর্বরতা চালানো হয়েছে। ছেলেটি বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ সে ছাগল চুরি করেনি। এব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর সুনীল চন্দ্র ঘোষের সেল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ না পাওয়াই তাঁর মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বোয়ালখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন ফারুকী এব্যাপারে পূর্বকোণকে বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনা পুলিশকে জানানো হলো শুক্রবারে। অভিযোগের বর্ণনায় এটি জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে গণ্য করছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ইয়াছিন, বাবু, সাদ্দাম নামে তিনজন অপরাধী চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট