চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গান, ছড়া, কবিতায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা চট্টগ্রামের মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংগীত, জাগরণের গান, লালনগীতি, আবৃত্তি, অভিনয় আর বিশিষ্টজনদের কথামালা দিয়ে শেষ হয়েছে সিআরবি রক্ষায় গঠিত নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’র সমাপনী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। গতকাল বিকালে সিআরবি চত্বরে অনুষ্ঠিত এই সাংস্কৃতিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. অনুপম সেন।

 

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি চট্টগ্রামবাসীর আবেগের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে সিআরবি থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতেও সিআরবি রক্ষার জন্য তিনি উদ্যোগী হবেন। কারণ পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রেখে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে অন্যতম পরিবেশবাদী নেতা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে সিআরবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ শুরু হয়। পরে দেশাত্মবোধক গান, জাগরণের গান, সিআরবিকে নিয়ে লেখা প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের, অসীম দাশগুপ্ত, নারায়ণ দাশ, সাইফুদ্দিন মাহমুদ খান, কায়সারুল আলম, সৈয়দ মোসলেহ উদ্দিন মানিক, অজয় চক্রবর্তী প্রমুখ।

 

এছাড়া কবিতা পাঠ করেন কবি আবু মুসা চৌধুরী, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, মোদাচ্ছের আলী, মিনু মিত্র, বিপ্লব কুমার সেন। আবৃত্তি করেন তৈয়বা জহির আরশি। শ্রুতি নাটক করেন মঈন উদ্দিন কোহেল ও ইলমা আইলিন মৃত্তিকা। বাউল গান পরিবেশন করেন চবির সহকারী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়া। গান, কবিতা, আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে চলে বিশিষ্টজনদের বক্তৃতা। এ সময় বক্তরা বলেন, দীর্ঘ দেড় বছরের কাছাকাছি সময় ধরে সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ। এই আন্দোলন চলেছে বিরতিহীনভাবে। একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এমনকি ঈদ, পূজা, পার্বণসহ উৎসবের দিনও আন্দোলন চলেছে। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এমন দীর্ঘ আন্দোলন নজিরবিহীন।

 

বক্তারা বলেন- টানা ৪৮২ দিনের এই আন্দোলনকে প্রতিকূল আবহাওয়া, রোদ, বৃষ্টি কোনো কিছুই থামাতে পারেনি। নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের অনেক সহকর্মী তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে এ আন্দোলনে প্রতিদিন উপস্থিত হয়েছেন। তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। চট্টগ্রামের সিংহভাগ সমাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা।

 

সমাবেশে বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাসেম, নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আব্দুচ ছালাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দিন। এছাড়াও বক্তব্য দেন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শ্রমিক লীগ নেতা আহাদ, কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক ঋত্বিক নয়ন, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, হেলাল উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, শিবু দাশ, সব্যসাচী টিটু, রাহুল দাশ, এডভোকেট রাশেদুল আলম, সাজ্জাদ হোসেন, মাহমুদুল করিম, মাইমুন উদ্দিন মামুন প্রমুখ।

 

আজ সিআরবিতে মহাসমাবেশ

সিআরবি ‘রক্ষায়’ ৪৮৩ দিনের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটছে আজ

চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সিআরবি ‘রক্ষার জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ২টা থেকে নগরীর সিআরবি এলাকায় নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ

অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। দল-মত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে মহাসমাবেশে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের নেতারা।

 

শহরের ভেতরে সবুজের আধার সিআরবি এলাকায় পিপিপি’র ভিত্তিতে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন চট্টগ্রামের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন এবং সিনিয়র আইনজীবী ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুলের নেতৃত্বে গঠন করা হয় নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম।

 

আন্দোলনের পাশাপাশি সিআরবি থেকে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প সরাতে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দেন চট্টগ্রামের সব মন্ত্রী এবং এমপিরা। এরমধ্যে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় এই প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও সিআরবিতে হাসপাতাল ‘হচ্ছে না’- এমন মনোভাব ব্যক্ত করা হয়। এরপর শনিবারের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে ৪৮৩ দিনের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটছে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট