চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বপ্ন ছুঁতে গিয়ে উদ্যোক্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বেকার বসে না থেকে ছোট কিংবা বড় কোনো একটা কিছু শুরু করা উচিত। চাকরির পেছনে না ছুটে অল্প পুঁজি নিয়ে সততার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত হার মানা যাবে না। কোনো কাজই ছোট নয়, যদি সেটাকে ভালোবেসে মন দিয়ে করা যায়। মনে রাখতে হবে সফলতা সহজে ধরা দেয় না, আর যেটা সহজে ধরা দেয় সেটা সফলতা নয়। ভালো চাকরির জন্য ভেঙে না পড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করে যাওয়া উচিত। প্রত্যেক সমস্যার মাঝেই লুকিয়ে আছে সমাধান। সেটি খুঁজে বের করতে হবে। তাহলেই একদিন সফলতা আসবে।

 

জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সফল নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা মোস্তফা সোহানী ও ‘ক্যারি উইথ কেয়ার’র প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল মিঠুর সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করে ভালো চাকরির অফার পেয়েও যোগ দেননি চাকরিতে। দু’জনেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে করে শুরু করেন ব্যবসা। তরুণ এই দু’জন এখন বলা চলে সফল উদ্যোক্তা।

 

নিজের স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প বলতে গিয়ে সোহানী এন্ড কনসোসিয়েটস (এসএন্ডসি) গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হুমায়রা মোস্তফা সোহানী বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই কিছু করবো। ব্যাংকে ভালো চাকরির অফার পাওয়ার পরও সেখানে যোগ দিইনি। আমার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করেন ছাত্রজীবনে শখের বসে শেখা চিত্রকর্ম। সেই চিত্রকর্ম বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছিলাম। সেই টাকাকে পুঁজি করেই তিনজন কর্মী নিয়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করি অন্দরসজ্জার প্রতিষ্ঠান ‘সোহানী’স ইন্টেরিয়র’। এভাবেই পথ চলা শুরু।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে স্নাতকে পড়াশোনা করছিলাম। এদিকে মনের মধ্যে অন্য স্বপ্ন। একসময় স্থাপত্য (আর্কিটেকচার) নিয়ে পড়ার একটি বৃত্তি পাই। সুযোগটা আর হাতছাড়া করিনি। পাশাপাশি অন্দরসজ্জা (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এটিই বদলে দেয় জীবনের গতিপথ। হয়ে উঠি স্থপতি। বর্তমানে আমি সফল নারী উদ্যোক্তা। আমার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক কর্মীর। যদিও এতদূর আসার পথ মোটেও সহজ ছিল না। মন দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করি, ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে আমার কোম্পানির সংখ্যা চারটি। সোহানী এন্ড কনসোসিয়েটস (এসএন্ডসি) গ্রুপ অব কোম্পানি নামে পরিচিত।

 

ডেলিভারি কোম্পানি ‘ক্যারি উইথ কেয়ার’র প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল মিঠু ক্যারিয়ার শুরু করেন চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টের চাকরি দিয়ে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে সেটি ছেড়ে দিই। তারপর দুই বছর কল সেন্টারে চাকরি করি। কানে সমস্যা দেখা দেয়ায় সেটিও ছেড়ে দিই। বেকার হয়ে পড়লে ২০১৮ সালে পাঠাও ফুড চট্টগ্রামে আসার পর সেখানে কাজ শুরু করি ফুডম্যান হিসেবে। ২০২০ সালের শুরুতে করোনার কারণে ফুড ডেলিভারির কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে জমা টাকাও শেষ। আবার বাবা থেকে পকেট খরচের টাকা নিতে লজ্জা লাগতো। ততদিনে বুঝে যাই আমাকে দিয়ে আর চাকরি হবে না। তাই চাকরির পেছনে আর না ঘুরে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করি।

 

কাস্টমার সার্ভিসে জব আর ফুড ডেলিভারির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানি ‘ক্যারি উইথ কেয়ার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলি। প্রথমে দুইজন রাইডার দিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারাও স্টুডেন্ট। কেউ নিজের উপার্জন দিয়ে পড়াশোনা চালাচ্ছেন একইসঙ্গে পরিবারও চালাচ্ছেন।

 

মোজাম্মেল মিঠু আরও বলেন, একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে পড়ালেখা শেষ করেছি। চাকরির বেতনে নিজেই চলতে পারি না, সংসার কিভাবে চলবে। তাই আর চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে যাই। ইচ্ছে নিজেই অন্যকে চাকরি দিব। আমার কোম্পানিতে বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত ছেলেরা চাকরি করছেন। কাজটা ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন ভালোবেসে করলে সেখানেই সফলতা পাওয়া যায়। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা লাভ করে অন্যের প্রতিষ্ঠানে শ্রম আর মেধা না দিয়ে নিজেই কিছু একটা শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ নিজের প্রতিষ্ঠানে শ্রম আর মেধা দিলে একসময় অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়। এভাবে বেকারত্ব কমে আসবে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট