চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রোগী বাড়ছে, গড়ে ওঠছে না বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

মো. হাসান। কর্মরত অবস্থায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মধ্যবয়সী এ যুবক। যদিও হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন, হাসানের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকের কারণে। যদি ৩ ঘণ্টার মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যেত, তাহলে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরতে পারতো হাসান। শুধু হাসানই নয়, চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে। শুধু তাই নয়, দিন দিন বৃহত্তর চট্টগ্রামে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বাড়লেও গড়ে ওঠছে না বিশেষায়িত কোন হাসপাতালও। যার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও ঠেকানো যাচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমে বেড়ে চলেছে। শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই চলতি বছরে স্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল প্রায় দশ হাজার রোগী। এরমধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাধিকেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে স্ট্রোক রোগী। এসব রোগী চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলা থেকেই এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিনদিন যে পরিমাণ রোগী বাড়ছে, স্ট্রোক রোগীদের জন্য সে পরিমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রই গড়ে ওঠেনি চট্টগ্রাম বিভাগে। যার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগেও রোগীর চাপে টইটুম্বর হয়ে ওঠে। ওয়ার্ডের মাত্র ৩৩ শয্যার বিপরীতে গড়ে দেড়শতাধিক রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে। এতে করে রোগী ও চিকিৎসকদের সেবা প্রদান ও গ্রহণে হিমশিম খেতে হয়। তাই রোগীদের সেবার পরিধি বৃদ্ধির জন্য পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

 

নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামান আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামে কয়েক বছরের মধ্যে প্রচুর স্ট্রোকের রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরাও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসা পরিধি বৃদ্ধির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন রয়েছে চট্টগ্রামে।

 

নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দাদার বলেন, স্ট্রোকের রোগী এখন ওয়ার্ড ছাড়িয়ে বারান্দাসহ এমনকি ওয়ার্ডের বাইরেও ভর্তি দিতে হচ্ছে। শয্যা সংকট থাকলেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে আসছি। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও বিভাগের নোয়াখালী, লহ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলার স্ট্রোক আক্রান্ত নিম্ন ও মধ্যে আয়ের রোগীদের সংখ্যাই এখানে বেশি।

 

সচেতনতায় ৯০ শতাংশ প্রতিরোধ সম্ভব : জীবন যাপনের পরিবর্তন এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক বাড়ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসা শতভাগ নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়মতান্ত্রিক চলাফেরা করে সুস্থ থাকা সম্ভব। সচেতনতাই একমাত্র এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। আর সচেতনতার ফলে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

 

চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোক রোগীর ৪০ শতাংশ ভালো হয় এবং ৪০ শতাংশ রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকে। আর বাকি ২০ শতাংশ স্ট্রোক রোগী মারা যায়। তবে প্রতিরোধের ফলে এ রোগ থেকে বেশি সময় বাঁচা সম্ভব। আর এজন্য স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

 

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ : আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘দ্যা পাওয়ার অব সেভিং প্রেশাসটাইম’। জনসাধারণের মধ্যে এ রোগের কারণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। আজ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা ও র‌্যালির। এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট