চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিত্রাং তাণ্ডবে বিধ্বস্ত দক্ষিণ হালিশহর জেলেপল্লী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে নগরীর উপকূলীয় এলাকার তিনশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সাগরের পানিতে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক মাছের ঘের। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সর্বশান্ত হয়ে গেছে নগরীর ইপিজেডের পেছনে দক্ষিণ হালিশহর আকমল আলী রোডের শিবুপাড়া জেলে পল্লীর প্রায় তিনশতাধিক পরিবার। ঘরবাড়ি হারানোর পাশাপাশি জেলেরা হারিয়েছেন উপার্জনের একমাত্র সম্বল মাছ ধরার জাল।

 

এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক মাছ ধরার নৌকা। সব হারিয়ে হাজারো মানুষের ঠাঁই এখন খোলা আকাশের নিচে। গতকাল আউটার রিং রোডের পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড পুরো উপকূল এলাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আকমল আলী রোডের জেলে পল্লী। জোয়ারের পানি সরে গেলেও তাণ্ডবের চিহ্ন রয়ে গেছে পুরো জেলে পাড়ায়।

 

খালি ভিটেতে বিষণ্ন মুখে বসে থাকা হালিশহর জেলে পাড়ার বাসিন্দা লিটন দাস বলেন, ‘রাত সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। ঘরের কোন কিছুই বের করতে পারিনি। এমনকি জমানো দশহাজার টাকাও নিতে পারিনি। ঘরসহ সবই পানিতে ভেসে গেছে।’ অপর জেলে পরিমল দাস বলেন, ‘পুরো ঘরটাই সাগরের বুকে হারিয়ে গেছে। রান্নার জিনিস থেকে শুরু করে কোন আসবাবপত্র পাইনি। পরিবার নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছি।’

 

একই পাড়ার জেলে রণজিত দাস বলেন, ‘জেলেপাড়ায় প্রায় কয়েকশতাধিক মাছ ধরার জাল সাগরের পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকাই এসব জাল জেলেপাড়ার বিভিন্নস্থানে স্ত‚প করে রাখা ছিল। অত্যাধিক ভারি হওয়ায় জালগুলো কেউ সরাতে পারেনি। চোখের সামনেই সব পানিতে ভেসে গেছে। জাল এবং ঘর কোনটাই বাঁচাতে পারিনি।’

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, সিত্রাংয়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে এ জেলেপাড়া। জেলে পল্লীর প্রায় প্রত্যেকটি ঘর ভেঙে গেছে। তিনশ পঞ্চাশ পরিবারে এখন প্রায় নিঃস্ব। গত সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে জেলেদের মাঝে শুকনো খাবার এবং রাতে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া ২ টন চাল এবং ৩৫০ জন কার্ডধারী জেলেদের মাঝে নিষেধাজ্ঞার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের বরাদ্দকৃত চাল আজ মঙ্গলবার বিতরণ করা হবে।

 

এছাড়া প্রতিটি পরিবারকে ১ বান করে ঢেউটিন বরাদ্দের জন্য জেলাপ্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। শুধু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত নয়, পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী উপকূল পর্যন্ত সাগর পাড়ে নোঙর করে রাখা শতাধিক মাছ ধরার নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলে সর্দার খেলন দাস পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুধুমাত্র বারুণী ঘাটে নোঙর করা বিশটিরও বেশি নৌকা ভেঙে গেছে। কাটগড়, হালিশহর ও কাট্টলী উপকূলেও বেধে রাখা জেলেদের নৌকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে এখনো নিজেদের নৌকা খুঁজে পাননি।’

 

এদিকে পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের। গতকাল সকাল থেকে সৈকতের বিভিন্ন খালে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি রুই কাতলা শিকারে ব্যস্ত দেখে গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার নিরিবিলি নিরূপমা ফার্মসের অন্যতম মালিক সৈয়দা সারোয়ার জাহান পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের এগ্রো ফিসারিজ ফার্মসের ৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

এসব ঘেরে সামুদ্রিক চিংড়ি, কোরালের সাথে মিঠা পানির রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। পানিতে প্রায় পাঁচলক্ষাধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ উত্তর কাট্টলী এলাকার ফরিদ চৌধুরী বলেন, ৫টি মৎস্য ঘেরের সবকটিই তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর ঘেরে ছিল কয়েক লক্ষ টাকার চিংড়ি। একই এলাকার জনি, এস্কান্দর, ইলিয়াছ, শাহাজাহান, হালিশহর এলাকার চানমিয়াসহ প্রায় সবারই একই অবস্থা।

 

তবে আউটার রিং রোড ও বেড়ি বাঁধের জন্য প্রাণহানির মতো কোন ঘটনা না ঘটলেও উপকূলের প্রায় বেশিরভাগ ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন খাল দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে হালিশহর থেকে কাট্টলী পর্যন্ত কয়েকশ একর ফসলী জমি। উত্তর কাট্টলী এলাকার কৃষক মো. ইলিয়াছ বলেন, প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ করেছিলাম। কিন্তু জোয়ারে পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে সব ফসলী জমি।’

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট