চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার হয়নি ২২ বছরেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ অক্টোবর, ২০২২ | ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

২০০০ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কোরবানীগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মো. লেদু সওদাগর। চাঁদাবাজির ঘটনার জের ধরে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনার পর কোরবানিগঞ্জের বাঁশঘাটায় সিটি কর্পোরেশনের একটি পরিত্যক্ত ভবনে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ৬ মাস পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, খাতুনগঞ্জে দিনে হাজার কোটির টাকার বেশি লেনদেন হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ নগদ টাকা নিয়ে সওদা করতে আসেন। বেচাকেনার সুবিধার জন্য দেশের সবকটি ব্যাংকের একাধিক কার্যালয় রয়েছে খাতুনগঞ্জে। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় ব্যাংক ও নগদে। কিন্তু নগদ টাকা বহন, ব্যাংকের আনা-নেওয়া ও নিরাপত্তার কাজটি নিজ দায়িত্বে করতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০০০ সালে লেদু সওদাগর হত্যাকাণ্ডের পর স্থাপিত পুলিশ ফাঁড়ি জনবল সংকটের অজুহাতে গুটিয়ে নেওয়া হয়। দিনে হাজার কোটি টাকার লেনদেন, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের উৎপাত, চাঁদাবাজিসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা লেগেই রয়েছে। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি করে আসছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও বাণিজ্য এলাকার উন্নয়নে কারোরই নজরদারি নেই।’

 

গত ১৭ অক্টোবর খাতুনগঞ্জের চান মিয়া লেনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাসুদ নামে এক শ্রমিককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। পিকআপ ভ্যান পার্কিং করা নিয়ে পিকআপ চালক রাসেলের সঙ্গে মাসুদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের সন্ধ্যায় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মাসুদকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গত বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাসুদ। শ্রমিক মাসুদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কাজ-কর্ম বন্ধ করে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে শ্রমিকেরা। অচল হয়ে পড়ে দেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যপাড়া খাতুনগঞ্জ।

গত বৃহস্পতিবার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়ন। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

 

মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমাবেশে ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা খাতুনগঞ্জে নিরাপত্তাব্যবস্থার দাবিতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি করেন।
চাক্তাই এলাকায় বাকলিয়া থানার অধীনে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। আর কোতোয়ালী থানার অধীনে বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ এলাকায় ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়।’

 

ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা জানান, পিকআপ ভ্যানের চালক ও হেলপারদের বেশির ভাগই কিশোর বয়সী। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। নানা ছুতোয় প্রায়শই শ্রমিক-দোকান কর্মচারী ও লোকজনের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে আসছে। ভ্যান চালকদের বেশির ভাগই খাতুনগঞ্জ সংলগ্ন আমিন হাজি রোড এলাকা ও আশপাশে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকেন। সন্ধ্যার পর মাদক ও জুয়ার আড্ডায় ডুবে থাকে। ওই এলাকার এক ছাত্রলীগ নেতার ছত্রছায়ায় পিকআপ শ্রমিকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতারা। মাসুদ হত্যাকাণ্ডের পর ওই রাজনৈতিক বড় ভাই গা-ঢাকা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট