চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হালদা’র উৎসস্থল সুরক্ষায় উদ্যোগ নেই

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

২২ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হওয়ার দুই বছরেও প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ঐতিহ্যবাহী হালদা নদীর রামগড়ের পাহাড়ি এলাকার উৎপত্তিস্থল বা উৎসস্থল সুরক্ষায় সরকারি কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ছোট বেলছড়ি নামক দুর্গম এলাকার হাসুকপাড়া পাহাড় থেকে হালদা নদী উৎপত্তি হয়ে মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্যদিয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে।

 

এদিকে, মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার প্রায় দুই বছরেও নদীর উৎপত্তিস্থল হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশের সুরক্ষা বা উন্নয়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ছোট বেলছড়ি নামক দুর্গম এলাকার হাসুকপাড়ার নদীর উৎসস্থলের পাহাড়ের বনবাদাড়

কেটে উজাড় করা হচ্ছে। বন-জঙ্গল- লতা গুল্ম শূন্য হওয়ায় পাহাড় টিলাগুলো বষূায় বৃষ্টির পানি ধারণের ক্ষমতা হারাচ্ছে। পাহাড়ের পদদেশ থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক গতি মানব সৃষ্ট বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। পানি প্রবাহের সরু নালা বা ছড়া কেটে জমিতে রুপান্তরিত করে ধান চাষ করা হচ্ছে। উৎসস্থল হতে পাশ্বর্বর্তী মানিকছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশে ছোট বড় অংশ বাঁধ তৈরি করায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

অন্যদিকে, মানিকছড়ি এলাকায় হালদা নদীর তীরে এবছর নতুন করে তামাকের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এতে পানি দূষণের আশংকা দেখা দিয়েছে। রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও নদীর উৎপত্তিস্থলের বাসিন্দারা এর কিছুই জানে না।

 

এছাড়া এ নদী যে একটি বিখ্যাত নদী এ কথাও এখানকার মানুষের অজানা। সরকারিভাবেও নদীটির গুরুত্ব ও ঐতিহ্য সম্পর্কে এখানকার বাসিন্দারের জানানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমন কি মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হওয়ার দুই বছরেও উৎপত্তিস্থলে নূন্যতম একটি সাইনর্বোড বা বিলর্বোডও স্থাপন করা হয়নি।’ তিনি বলেন, নদীটির বিষয়ে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম নেওয়া হলে মানুষ এ নদীর ব্যাপারে যত্নবান হতো।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদার উৎসস্থল রক্ষার জন্য সেখানকার পাহাড়ি টিলাগুলোর প্রাকৃতিক বন জঙ্গল, লতাগুল্ম ধ্বংস করা যাবে না। উৎসস্থলে বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখায় জল প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত এ বাঁধ অপসরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

 

তিনি আরও বলেন, দেশের এ ঐতিহ্যবাহী নদীর উৎপত্তিস্থলে মনুমেন্ট স্থাপনসহ যাতায়তের রাস্তাটির উন্নয়ন করা জরুরি। বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেহেতু নদীটির গুরুত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এখন এর রক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্বও রাষ্ট্রের।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানিকছড়িতে নদীর তীর এলাকায় তামাক চাষ বন্ধ করলেও এবছর আবার নতুন করে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখছে না।

 

জনাব কিবরিয়া বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু জীববৈচিত্র ঐতিহ্য হালদা’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আজ (শনিবার) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে একটি কর্মশালারাও আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জীব বৈচিত্র্য ঐতিহ্য ঘোষণার চেয়ে নদীটি রক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ জরুরি।’ রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দোকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, ‘রামগড় থেকে উৎপত্তি হওয়া হালদা পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্ব। ঐতিহ্যবাহী এ নদীর উৎসস্থল সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট