চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভুঁইফোড় আইএসপি’র ছড়াছড়ি কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না গ্রাহক

সারোয়ার আহমদ

২২ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে এখন নাম সর্বস্ব ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ থাকায় ভুঁইফোড় এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অনিবন্ধিত। তবে পেশীশক্তি প্রদর্শন ও এলাকাভিত্তিক রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে এসব নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এলাকার ইন্টারনেট সেবা তাদের দখলে নিয়ে রেখেছে।

অন্যদিকে, ভাল মানের কোন প্রতিষ্ঠান ওইসব এলাকায় ইন্টারনেট সেবা দিতে গেলে রাতের আঁধারে ইন্টারনেটের তার (অপটিক্যাল ফাইবার) চুরি করা কিংবা কেটে দেওয়ার মত অহরহ ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে প্রকৃত ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকেরা।

 

গ্রাহকদের দাবি, এলাকাভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে অন্য ভাল কোন প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে না। তারা একচেটিয়া ব্যবসা করে। কিন্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইন্টারনেট স্পিড ও সেবার মান ঠিক থাকে না। এছাড়া লাইনের সমস্যার কথা জানালে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হয় লাইন সংস্কারের জন্য। আর ভাল মানের প্রতিষ্ঠান না থাকায় ইন্টারনেট সেবামূল্যে প্রতিযোগিতা নেই। এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো যা দাবি করে তাই দিয়ে ইন্টারনেটের লাইন নিতে হয়।

এদিকে, ইন্টারনেট সেবা নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি’র চট্টগ্রামে কোন কার্যালয় নেই। ফলে তদারকি অনেকটাই নগণ্য। কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিংবা সময়ে সময়ে ঢাকা থেকে টিম এসে ইন্টারনেট সেবার তদারকি করতে হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে নিজস্ব কোন কার্যালয় না থাকায় আইএসপি’র লাইসেন্স নবায়নের জন্য ঢাকার ওপরে নির্ভর করতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
গ্রাহকদের দাবি, চট্টগ্রামে বিটিআরসি’র নিজস্ব কার্যালয় ও আলাদা লোকবল থাকলে এলাকাভিত্তিক ভুঁইফোড় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি পেত ইন্টারনেটের গ্রাহকেরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিআরসি’র পরিচালক (লাইসেন্স) মো. নূরুন্নবী পূর্বকোণকে বলেন, নতুন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারের লাইসেন্স দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে বিটিআরসি। এছাড়া লাইসেন্সধারীদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারে এবং লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে পারে অনলাইনে। তবে লাইসেন্স ইস্যু ও লাইসেন্স প্রদান ঢাকাতেই হয়। চট্টগ্রামে এর কোন কার্যালয় নেই।
তিনি আরো বলেন, লাইসেন্স বিষয়ক কোন অভিযোগ থাকলে বিটিআরসি’র এনফোর্সমেন্ট ও ইন্সপেকশন বিভাগ থেকে তদন্তের জন্য চট্টগ্রামে টিম যায়।

 

অন্যদিকে, আইএসপি কোম্পানিগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক রাজিব শাহরিয়ার রুবেন্স পূর্বকোণকে বলেন, বিটিআরসি থেকে তিন শ্রেণির আইএসপি লাইসেন্স দিয়ে থাকে। জাতীয়, বিভাগীয় ও থানা ভিত্তিক। যদিও বর্তমানে নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শুধু চট্টগ্রাম শহরেই থানা ভিত্তিক লাইসেন্সধারী আইএসপি আছে ৮৫টির মতো। আর বিভাগীয় লাইসেন্সধারী আছে ২৫টি। এর বাইরে অলি গলিতে অনিবন্ধিত অনেক আইএসপি রয়েছে। যাদের কারণে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেট সেবা পান না। এছাড়া রাস্তা ফাইবারের জঞ্জাল তৈরির পেছনেও অনিবন্ধিত লাইসেন্সধারী আইএপিগুলো অনেকাংশেই দায়ী।

 

এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, লাইসেন্সধারীদের অনেকেই বছরে বছরে লাইসেন্স নবায়ন করলেও তাদের ইন্টারনেট সেবার ব্যবসা নেই। তাদের অনেকেই চুক্তি ভিত্তিতে অন্যান্যদের মাধ্যমে আইএসপি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যা অনেকটা নিজের লাইসেন্স অন্যকে ভাড়া দেওয়ার মতো।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট