চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নির্বিচারে ইন্টারনেট ও ডিশের তার কাটলেন কাউন্সিলর শৈবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

সৌন্দর্যহানি ও অগ্নিঝুঁকির অভিযোগ এনে ইন্টারনেট ও ডিশের (ক্যাবল টেলিভিশনের ফাইবার ক্যাবল) লাইন কেটে দেন জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় হঠাৎ করে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নির্বিচারে ক্যাবল কাটা শুরু করেন। এতে সাত ঘণ্টা ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে জামালখানসহ নগরীর সাত এলাকা।

 

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠনের নেতাদের দাবি, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টেলিভিশনের তার কেটে দেয়ায় চকবাজার, দেওয়ানবাজার, জামালখান, চান্দগাঁও, মোহরা, শুলকবহর ও বাকলিয়া এলাকার গ্রাহকরা ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সংযোগ থেকে বঞ্চিত হন। টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন দেখা থেকে বঞ্চিত হন বহু মানুষ।

 

ব্যবসায়ী আয়ুব আলি জানান, হঠাৎ করে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার কারণে তাঁর এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে গতকাল অনলাইনে কোচিং করতে পারেনি।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সহ-সভাপতি আনোয়ার আজিম জানান, ক্যাবল কেটে দেয়ার কারণে প্রায় ৪ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে তাৎক্ষণিক হিসেবে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

 

আনোয়ার আজিম অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাবলগুলো কাটার পর আমাদের টেকনেশিয়ানরা ফাইবার পুনরায় স্থাপন করতে গেলে কাউন্সিলর শৈবাল বাধা দেন। জামালখানের কাউন্সিলর বলেছেন- লাইসেন্স ছাড়া এসব ব্যবসা করা হচ্ছে। অথচ বিটিআরসির লাইসেন্স ছাড়া কেউ ব্যবসা করে না। কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই রীতিমতো ফেসবুকে লাইভে এসে মূল্যবান ক্যাবল কেটেছেন কাউন্সিলর। যেটা কোনভাবেই কাম্য নয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ক্যাবল টিভি আর ইন্টারনেটের সংযোগ হাজার হাজার। কয়টি ক্যাবল অপারেটর রয়েছে আমি জানি না। প্রায় সময় দেখি বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগছে।

গতকাল (বুধবার) রাতেও হেমসেন লেনের মুখে আগুন লেগেছে। এরপর দেখলাম সিকদার হোটেল থেকে হাইওয়ে সুইটস পর্যন্ত উপরে নিচে হাজার হাজার ক্যাবল রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে একট বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছিল। বান্ডিল করে যেসব ক্যাবল রাখা হয়েছিল তা কেটে দিয়েছি। ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ব্যয় সাপেক্ষে। সবগুলো ক্যাবল একসাথে বেঁধে রাখতে পারে। নিচে না হলেও উপরে সৌন্দর্য বজায় রেখে করতে পারে। বিষয়টি আমি মেয়র মহোদয়কে বলেছি। মেয়র মহোদয় ইন্টারনেট আর ক্যাবল অপারেটরদের ডেকে বসে সমাধান করতে বলেছেন।

ক্যাবল অপারেট ও ইন্টারনেট অপারেটরদের দাবি, মূল ক্যাবল কাটা পড়ার কারণে বিস্তৃত এলাকা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে প্রসঙ্গে শৈবাল দাশ সুমন বলেন, বিশাল এলাকা হতেও পারে। এরা সবকিছু করবে কেউ কিছু বলতে পারবে না। বিষয়টি এরকম নয়।

পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ ক্যাবল কেটে দেয়ার কারণে পরীক্ষার্থী, বিভিন্ন অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর শৈবাল বলেন, ‘কখনো এসএসসি, কখনো এইচএসসি আবার কখনো ডিগ্রি পরীক্ষা থাকে। অফিস আদালতে রয়েছে তাও ঠিক। কাটা ক্যাবল ঠিক করতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না।’

মুঠোফোন কথা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ক্যাবল লাইন কাটার বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে ক্যাবল কাটার পর অপারেটর সংশ্লিষ্ট লোকজন আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তাদেরকেও বলেছি, বিষয়টি আমি জানি না। মেয়র বলেন, লাইন কাটার পর কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আমার কাছে এসেছিলেন। তাকেও বলেছি কাজটি ঠিক হয়নি। ভুল করেছো। ক্যাবল অপারেটর পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল।

ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠান সিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল কুমার পালিত বলেন, খবরটা পেয়েছি দুপুর বারোটায়। অনেকগুলো লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের সাথে আলোচনা না করে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে হঠাৎ করে ক্যাবল কেটে দিয়েছেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। এতে মূল লাইন কেটে ফেলা হয়েছে।

 

শ্যামল পালিত বলেন, যেখান থেকে লাইন গেছে প্রেস ক্লাবে। লাইন গেছে চকবাজার, দেওয়ানবাজার, জামালখান, শুলকবহর, মোহরা, চান্দগাঁও ও বাকলিয়া। মেইন লাইনটা কেটে যাওয়ায় আমাদের সম্পূর্ণ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের লোকজনকে কাজ করতে পাঠিয়েছি। এমনভাবে লাইন কাটা হয়েছে দ্রুত লাইনগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমার সাথে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ঝুলে যাওয়া তার কেটেছে। আমাদের ক্যাবল কাটেনি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- আমাদের মূল লাইন কেটে গেছে। যার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যখন চলছিল চারটা পর্যন্ত লাইন চালু করতে পারেনি। এতে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের উপর। আমাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ করে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এর আগেও দুইবার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে জামালখান এলাকায়।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট