চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৯ সড়কে দৈনিক সময়ের অপচয় ৪০ ঘণ্টা

রেল ক্রসিংয়ে থমকে নগরী

মিজানুর রহমান

৬ অক্টোবর, ২০২২ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

সব শহরে রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করতে তিন মাস আগে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে চট্টগ্রাম শহরে থাকা রেলক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এতে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানজট যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটছে। একইসঙ্গে অপচয় হচ্ছে প্রচুর শ্রমঘণ্টার।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৮ জুন একনেক সভায় শহরের রেলক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তারা শুনেছেন। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি। বৈশ্বিক কারণে ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় আপাতত বড় প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে না। তাই রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করতে এখনই কোনো প্রকল্প নেবে না রেলওয়ে।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বকোণকে জানান, রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। এ বিষয়ে কোনো চিঠিও পাইনি। আপাতত শহরের রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। সরকারি নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

৮ ঘণ্টার বেশি বন্ধ থাকছে সড়ক
সংশ্লিষ্টরা জানান- চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে কদমতলী সড়ক ক্রস করে ঐ ২৪ জোড়া, পাহাড়তলী লিংক সড়ক ক্রস করে ১৪ জোড়া, জাকির হোসেন সড়কের দুই জায়গা ক্রস করে ২৪ জোড়া, কৈবল্যধাম সড়ক ক্রস করে ১৪ জোড়া ও নিউ মনসুরাবাদ সড়ক ক্রস করে ১৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া আমবাগান সড়ক ক্রস করে ১০ জোড়া, বায়েজিদ বোস্তামি সড়কের দুই জায়গা ক্রস করে ২০ জোড়া, হাটহাজারী-চট্টগ্রাম রোড ক্রস করে ২ জোড়া এবং আরাকান সড়ক ক্রস করে ২ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।

সড়ক ক্রস করে একবার ট্রেন যাওয়ার সময় বার ফেলে ৭-১০ মিনিট দুই পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন কদমতলী সড়কে প্রায় ৮ ঘণ্টা, পাহাড়তলী লিংক সড়কে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা, জাকির হোসেন সড়কে প্রায় ৮ ঘণ্টা, কৈবল্যধাম সড়কে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ও নিউ মনসুরাবাদ সড়কে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকছে। এছাড়া আমবাগান সড়ক ৩ ঘণ্টার বেশি, বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক সাড়ে ৬ ঘণ্টা, হাটহাজারী-চট্টগ্রাম ও আরাকান সড়ক ৪০ মিনিট বন্ধ থাকছে।

 

রেলক্রসিং যেভাবে যানজট বাড়াচ্ছে

গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং এলাকায় দেখা গেছে- বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক ধরে মিনিটে ৪০টির বেশি যান চলাচল করছে। চবি থেকে আসা শাটল ট্রেন যাওয়ার জন্য ৪টা ৩৭ মিনিটে বার ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন যাওয়ার পর ৪টা ৪৪ মিনিটে বার তুলে দেন গেটম্যান। তবে ৭ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই নম্বর গেট মোড় থেকে শিশু কবরস্থান পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় ট্রেন যাওয়ার সময় এ যানজট আরও দীর্ঘ হয়।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কদমতলী রেলক্রসিং এলাকায় দেখা গেছে কদমতলী সড়ক ধরে মিনিটে ২৫টির বেশি যান চলাচল করছে। ঢাকাগামী মহানগর একপ্রেস ট্রেন যাওয়ার জন্য দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে সেখানে বার ফেলা হয়। ট্রেন যাওয়ার পর ১২টা ৩৪ মিনিটে বার তুললে যান চলাচল শুরু হয়। ১০ মিনিটে দুই পাশে যানজট হয় ২৫০ গাড়ির। এদিন সকাল ৮টায় ঝাউতলা রেলক্রসিং এলাকায় দেখা গেছে- চবিগামী শাটল ট্রেন যাওয়ার জন্য জাকির হোসেন সড়কে ৯ মিনিট যান চলাচল বন্ধ রাখায় ১৫০ যান আটকা পড়ে।

 

যানজট-দুর্ঘটনা ‘কমাবে’ ওভারপাস ট্রেন যাতায়াতে যতক্ষণ সড়ক বন্ধ রাখা হয়, কেবল ততক্ষণ নয়- এর প্রভাবে যানজট থাকে আরও অন্তত ৩০ মিনিট। একে খান, ঝাউতলা, দুই নম্বর গেট, অক্সিজেনে ৪টি ওভারপাস হলে নগরীর যানজট সহনীয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার জয়নাল আবেদিন পূর্বকোণকে বলেন, একবার ট্রেন গেলে ১০-১৫ মিনিট সড়ক বন্ধ থাকে। এতে যে যানজট তৈরি হয় তা স্বাভাবিক হতে আরও ২০-৩০ মিনিট লাগে। ওভার পাস নির্মাণ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

কেবল যানজট নয়- গত একবছরে নগরীর রেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ওভারপাস নির্মাণ করা হলে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমে আসবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান পূর্বকোণকে জানান, রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করলে যানজট এবং দুর্ঘটনা দুটোই কমবে। তবে ওভারপাস নির্মাণের আগে রেলওয়েকে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যান মেনে ওভারপাস নির্মাণ করতে হবে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট