চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

টাঙ্গুয়ার হাওরে ‘চাটগাঁর’ বোট

মিজানুর রহমান

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

দৃষ্টি সীমানার একদিকে ‘মেঘের বাড়ি’ মেঘালয়ের অপরূপ সব পাহাড়-অন্যদিকে কখনো আকাশের মতো নীল, কখনো আয়নার মতো স্বচ্ছ বিস্তৃত জলরাশি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এমন সমাহার দেখা মিলে কেবল টাঙ্গুয়ার হাওরেই। সুনামগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষা এই হাওরের সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে পর্যটকদের উপভোগ করাতে চট্টগ্রামের একদল তরুণ চালু করেছেন ভিন্ন আঙ্গিকের বিলাসবহুল দুই হাউস বোট ‘পালকি’ এবং ‘নোঙর’।

চলতি বছরের জুলাইয়ে চালু করা দৃষ্টিনন্দন এসব হাউস বোটে রয়েছে তারকামানের আবাসিক হোটেলের মতো সাজানো গোছানো কক্ষ। প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া ওয়াশরুম। সবুজে মোড়ানো বোটের ছাদে বসে বিকালের স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মাখা বা পূর্ণিমার আকাশে তারা দেখার সুবিধা। মিলে বোটেই রান্না করা বিখ্যাত মেজবানি মাংস, শুঁটকি ভর্তা থেকে শুরু করে নানা পদের জিভে জল আনা ‘চাটগাঁইয়া’ খাবার।

৫১টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তারা চলতি বছর অন্তত ৪০টি হাউস বোট চালু করেছেন। তবে আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে চট্টগ্রামের তরুণদের চালু করা হাউস বোট ‘পালকি’ এবং ‘নোঙর’ পরিচিতি পেয়েছে ‘চাটগাঁর বোট’ হিসেবেই। এ জন্য চট্টগ্রাম থেকে যেসব পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যান তাদের প্রথম পছন্দও থাকে এই দুটি হাউস বোট।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন- হাউস বোট ‘পালকি’ তৈরিতে প্রায় ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ এই বোট তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রায় ৫ মাস পর জুলাইয়ের ১৩ তারিখ বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ট্রিপে যায় ‘পালকি’। আরেক হাউস বোট ‘নোঙর’ তৈরির কাজও শুরু হয় এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এটিও বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ট্রিপে যায় জুলাইয়ে। ‘নোঙর’ তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

‘পালকি’র উদ্যোক্তা শাকিব নাবিল পূর্বকোণকে জানান, ৭৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৮ ফুট প্রস্থের ‘পালকি’তে ৬টি কেবিন এবং একটি লবি আছে। একসঙ্গে ২৪ জন পর্যটক এতে ভ্রমণ করতে পারেন। দুই দিন এক রাত টাঙ্গুয়ার হাওর এবং সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকা ঘোরা, থাকা-খাওয়াসহ জনপ্রতি খরচ পড়বে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত আমরা হাউজ বোটের অগ্রিম বুকিং নিচ্ছি।

স্থানীয় প্রশাসন হাউস বোট ট্যুরিজম ফ্রেন্ডলি নয় দাবি করে তিনি বলেন, পূর্ণিমার সময় পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু প্রশাসন এই সময় প্রায় আমাদের বোট রিকুইজিশন করে নিয়ে যায়। তারা অনেক সময় তেলের খরচও দেয় না। বাধ্য হয়ে পর্যটকদের বুকিং ক্যান্সেল করতে হয়। এ কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। প্রতিমাসে মাত্র ৩ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

প্রায় একই দাবি ‘নোঙর’র অন্যতম উদ্যোক্তা মঈন উদ্দিন আকবর এরও। তিনি পূর্বকোণকে জানান, বোটের রেজিস্ট্রেশন করার সময় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বছরে মাত্র ৪ মাস (জুলাই-অক্টোবর) বোট চলে। এই চার মাসের আয় দিয়ে পুরো বছরের খরচ মেটাতে হয়। বুকিং ক্যান্সেল করতে হলে খরচই তো উঠবে না। ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে মিলছে মাত্র দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা।

মঈন উদ্দিন আকবর জানান, ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রস্থের ‘নোঙরে’ ৮টি কেবিন আছে। একসঙ্গে ২২ জন পর্যটক এতে ভ্রমণ করতে পারেন। দুই দিন এক রাত টাঙ্গুয়ার হাওর এবং সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকা ঘোরা, থাকা-খাওয়াসহ জনপ্রতি খরচ পড়বে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। অসাম ট্যুরিজম, গো ট্রিপ, বুকিং বিডি, আমরা ভ্রমণ পোকা, ফ্রিডম ট্রাভেল স্কোয়াড এই হাউস বোট পরিচালনা করে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট