চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভরা মৌসুমেও হাসি নেই জেলেদের মুখে

মিটু বিভাস

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

বর্ষা মৌসুমে ইলিশ আহরণ শুরু হলেই চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হত উৎসব। টানা প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারদের আনাগোনায় মুখরিত থাকত জেলে পল্লিগুলো। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও কোন হাঁকডাক নেই এ অঞ্চলে। প্রত্যাশার অর্ধেক ইলিশও ধরা পড়েনি জেলেদের জালে। বিভিন্ন মৎস্য ঘাটগুলোতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের নৌকাগুলো ফিরছে প্রায় খালি হাতেই। অথচ এসব জেলেরা পুরো বছর অপেক্ষায় থাকে এই মৌসুমের জন্য। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরতে না পেরে হতাশ তারা। জেলেরা সাগরে ইলিশের বিচরণ কমে যাওয়ার কথা জানালেও মৎস্য অধিদপ্তরের দাবি সাগরে এবার প্রচুর ইলিশ এসেছে।

কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ঠিকমত সাগরে মাছ ধরতে পারেননি। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী উপজেলা এবং মহানগরে ২৭ হাজার জেলে নিয়মিত সাগরে মাছ ধরে থাকেন। ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজারের অধিক ফিশিং বোট সাগরে চলাচল করে। এর মধ্যে উপকূলীয় জেলেদের অর্ধেকের বেশি নৌকা বছরের অধিকাংশ সময় ব্যবহৃত হয় না। শুধুমাত্র ইলিশ মৌসুমে তারা সাগরে নৌকা নিয়ে যান।

গত ২৪ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তারা সাগরে নেমেছিল। প্রথম দিকে কিছু মাছ পাওয়া গেলেও হঠাৎ করেই যেন ইলিশের আকাল দেখা যায়। নগরীর রাসমনি ঘাট এলাকায় জেলে গোকুল জলদাস বলেন, পুরো মৌসুমের মধ্যে শুধুমাত্র গত পূর্ণিমার জো’তে চারপাঁচ দিন কিছুটা ইলিশ ধরা পড়েছে। আগামী রবিবার থেকে এই মৌসুমের শেষ, অমাবস্যার জো শুরু হবে। তারপর আবারও নিষেধাজ্ঞা।

এবার মাছ ধরা না পড়লে আমাদের পথে বসতে হবে। দেনার টাকায় জাল কিনেছি, নৌকা মেরামত করেছি। কিন্তু এখনও টাকা শোধ করা হয় নাই। বছরের বাকিটা সময় কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি। শুধু জেলোরই নন, ইলিশ মৌসুমে উপক‚লে ভিড় করা হাজারো ব্যবসায়ীদের মুখে এখন একই সুর।

সীতাকুণ্ডের সলিমপুর উপকূলের পাইকারী বরফ বিক্রেতা মো. লিটন মিয়া ভরা মৌসুমে প্রতিবছর আড়তদারদের কাছে দিনে গড়ে ২শ পিস বরফ বিক্রি করতেন তিনি। এবার দিনে ৫০ পিস বরফও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।

উপকূলে ইলিশের হাহাকার থাকলেও চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের দাবি সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। এবার মৌসুমের বেশিরভাগ সময় প্রতিক‚ল আবহাওয়ার কারণে তারা সাগরে নামতে পারেননি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের জেলেদের বেশিরভাগ ছোট নৌকা নিয়ে গভীর সাগরে মাঝ ধরতে যায়। এবার নিম্নচাপ থাকায় বেশিরভাগ সময় তারা গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি। শুধুমাত্র উপক‚লের কাছাকাছি যাদের জাল পোতা আছে তারাই সাগরে নেমেছিল। ফলে উপকূলীয় ঘাটগুলোতে মাছ কম এসেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে সরকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ কারণেই গত পূর্ণিমার জোতেও উপকূলীয় ঘাটগুলোতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে।’ আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া অমাবস্যার জোতেও ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে আবারও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২৮ অক্টোবর এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। দ্বিতীয় দফার এ নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে আর তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট