চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন ট্রেনের অপেক্ষা ফুরাবে কবে

মিজানুর রহমান

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন চট্টগ্রামের জিয়া উদ্দিন। স্বল্প বেতনের চাকরিতে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে ট্রেনই একমাত্র ভরসা তার। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে লাভজনক এই রুটে ট্রেনের টিকিট পেতে প্রতিবার রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয় তাকে। দালালের কাছ থেকে বেশি দামেও টিকিট কিনতে হয় কখনও কখনও।

শুধু জিয়া উদ্দিন নন। চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে প্রতিদিন এই ভোগান্তির শিকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এর বড় কারণ- এই রুটে বিপুল যাত্রী থাকলেও আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেয়নি রেলওয়ে। বরং প্রভাবশালীদের চাপে কম গুরুত্বপূর্ণ রুটে নতুন ট্রেন চালুর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়- চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে এখন ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। এরমধ্যে মহানগর একপ্রেস ১৯৮৫ সালে, মহানগর গোধূলী ১৯৮৬ সালে, সূবর্ণ এক্সপ্রেস ১৯৯৮ সালে, তূর্ণা এক্সপ্রেস ২০০০ সালে এবং ২০১০ সালে চট্টলা এক্সপ্রেস চলাচল শুরু হয়। সর্বশেষ ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে এই রুটে যুক্ত হয় সোনার বাংলা।

চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রুট চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করে মাত্র দুটি আন্তঃনগর ট্রেন। এরমধ্যে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ১৯৮৬ সালে এবং উদয়ন এক্সপ্রেস ১৯৮৮ সালে চলাচল শুরু হয়। অর্থাৎ গত ৩৪ বছর ধরে এই রুটে নতুন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-চাঁদপুর এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটেও।

৩৭ বছর আগে ১৯৮৫ সালে চালু হওয়া চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে মেঘনা এক্সপ্রেসই এখনও একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন। বিপুল যাত্রী চাহিদা থাকলেও এই রুটে তিন যুগ ধরে নতুন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেনি রেলওয়ে। এছাড়া চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করা বিজয় এক্সপ্রেস চালু হয় ২০১৪ সালে। ৭ বছরে এই রুটেও যুক্ত হয়নি নতুন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান- রেলমন্ত্রী হিসেবে নূরুল ইসলাম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজ এলাকা পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসসহ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে অন্তত ৫টি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়েছে। এসব রুটের চেয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশি হলেও কোনো নতুন ট্রেন চালু করা হয়নি।

গুরুত্বপূর্ণ এসব রুটে দীর্ঘদিন নতুন ট্রেন চালু না হওয়াকে চট্টগ্রামের প্রতি ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ হিসেবেই দেখছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, দেশের রাজস্ব আদায়ের বড় খাত চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন বৃদ্ধি, রেলপথের সংস্কার, সেবার মানোন্নয়ন করলে রেলওয়েই লাভবান হবে। তাদের আয় বাড়বে।

লোকোমোটিভ এবং লোকোমাস্টার সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটসহ কয়েকটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী। তিনি পূর্বকোণকে জানান, লোকোমাস্টার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। লোকোমোটিভ আনতেও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এসবের পর নতুন ট্রেন চালু করা হবে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট