চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পরিত্যক্ত টায়ারেই লার্ভা’র ঝাঁক

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬শ’। এর অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গেল তিন সপ্তাহে। আর এসব রোগীর প্রায় ৮৫ শতাংশই নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ছয়দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি এডিস লার্ভা পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারের মধ্যে। এছাড়া প্লাস্টিক আর ডাবের খোসায়ও মিলেছে এডিসের লার্ভা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ইতোমধ্যেই অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর’র প্রতিনিধি দল।

এদিকে, এডিস লার্ভার উপস্থিত পাওয়া এবং বংশ বিস্তারের ঘটনায় ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। আর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইইডিসিআর’র প্রদানকৃত তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। এছাড়া চলতি সপ্তাহে নগরজুড়ে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানোর কথাও জানানো হয় চসিকের পক্ষ থেকে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান শুরু করে আইইডিসিআর’র একটি দল।

এসময় তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকা এবং উপজেলার সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করেন। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। পাঁচদিন কার্যক্রম শেষ করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও বুধবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় কিছু পর্যবেক্ষণসহ তথ্য প্রদান করেন। যদিও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি আইইডিসিআর’র প্রতিনিধি দল।

আইইডিসিআর’র পর্যবেক্ষণে ওঠে আসে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে বাসা বাড়ি কিংবা পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমে ছিল। এসবের কারণে প্লাস্টিক ও টায়ারের মধ্যে বিস্তার ঘটেছে এডিস মশার। সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তারা এডিস মশার লার্ভারও খোঁজ পেয়েছেন।

তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী ও বহদ্দারহাট এলাকায়। এসব এলাকাগুলোতে নতুন পুরাতন গাড়ির টায়ারের পরিমাণ খুব বেশি ছিল। আর এসব টায়ারে জমে থাকা পানিতে লার্ভার উপস্থিত পেয়েছেন বলেও মৌখিকভাবে আইইডিসিআর’র প্রতিনিধি দল অবহিত করেন।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যায় বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায়। এছাড়াও ডবলমুরিং, হাজীপাড়া, কদমতলী, বন্দর এলাকায় পরিত্যক্ত টায়ারে লার্ভার উপস্থিত পাওয়া যায় বলে জানান তারা।

আইইডিসিআর জানান, টায়ারের পানি সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা থাকে। তাতে করে এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে খুব বেশি সহায়ক হয়। আর এ জন্য নতুন পুরাতন সকল টায়ার প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর পুরাতন টায়ারগুলোকে ফুটো করে দিলে তাতে পানি জমে থাকবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে এরবাইরে ডেঙ্গু বিস্তাররোধে চসিককে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘নগরীর হালিশহর, বহাদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, হাজিপাড়া, বন্দর এলাকায় লার্ভা পাওয়া গেছে। মূলত নগরীতে পরিত্যক্ত টায়ারের পরিমাণ বেশি থাকায় এসব স্থানে পানি জমে এডিস লার্ভা বংশবিস্তার ঘটিয়েছে। যার কারণেই এলাকাগুলো জুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর’ সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করেছেন। আমরাও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠাবো। সিটি কর্পোরেশনের বাইরে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়াতেও লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসেম বলেন, ‘আইইডিসিআর’র প্রতিনিধিরা ডেঙ্গুর লার্ভার সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রদান করেছেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বৃহস্পতিবার বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত টায়ারগুলো উচ্ছেদ করি।

এছাড়া আশাপাশের এলাকাতে মাইকিং ও প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক অভিযান অব্যহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহেও বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে একদিনে পুরো নগরীতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে।’

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট