চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৯ বছরেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই ধীরাশ্রম আইসিডির

সারোয়ার আহমদ

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি কন্টেইনারবাহী পণ্য রেলপথে পৌঁছে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে। তবে সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এই আইসিডি অনেক আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। তাই চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০০৩ সালে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে একটি বৃহৎ আইসিডি তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও ১৯ বছরেও দৃশ্যমান হয়নি ধীরাশ্রম আইসিডি। প্রকল্প গ্রহণের মধ্যেই রয়ে গেছে এই আইসিডি তৈরির কাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, এই প্রকল্পে অর্থায়ন না হওয়া ও বিদেশি দাতা সংস্থার অনাগ্রহের কারণেই প্রকল্পের কাজটি ঝুলে আছে।

মূলত, রাজধানী ঢাকার যানজট কমানো, বিপুল পরিমাণ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এবং সারাদেশে পণ্য পরিবহন আরও সহজ করার লক্ষ্যে ঢাকার কমলাপুর থেকে ধীরাশ্রমে আইসিডি স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এছাড়া কমলাপুর স্টেশনে প্রস্তাবিত মাল্টি মোডাল ট্রানজিট হাব নির্মাণ এবং ঢাকা চট্টগ্রাম করিডোরে হাই-স্পিড ট্রেনের স্টার্টিং স্টেশন এবং পদ্মা রেল লিংক কমলাপুর আইসিডি থেকে শুরু হবে। ফলে বিদ্যমান কমলাপুর আইসিডি সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং পণ্য হ্যান্ডলিং ও পরিবহনের ধীরাশ্রমে আরো বড় একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিডি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক।

 

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ কন্টেইনার ঢাকা অভিমুখে পরিবহন করা হয়। এর মাত্র ১০ শতাংশ রেলপথে পরিবহন হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ার কারণে খুব শিগগির কমলাপুর আইডিসির কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। এ কারণে সরকার কমলাপুর আইসিডি ধীরাশ্রমে স্থানান্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্মিত হলে বছরে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। যা কমলাপুর রেল স্টেশনের আইসিডিতে বছরে হ্যান্ডলিং হয় মাত্র ৯০ হাজার কন্টেইনার।

জানা যায়, ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণ প্রকল্পের জনবল নির্ধারণ-সংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি দুটি যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ২০০৭ সালের জুন মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রকল্পটি সব দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বলে সুপারিশ করা হয়। পরে তৎকালীন ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় যোগাযোগ উপদেষ্টা প্রকল্পটি রেলওয়ে কর্তৃক বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।

 

পরবর্তীতে প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখালেও তৎকালীন যোগাযোগ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় রেলওয়ে বিভাগ দ্বারা এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পের সব ডকুমেন্ট রেলওয়েকে হস্তান্তর করে। ২০০৭ সালের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। যার বেশির ভাগ অর্থায়ন আইডিএ এম্পটাপ গ্র্যান্ড থেকে পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে রেলওয়ে বিভাগ প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং মাস্টারপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর প্রকল্পটি এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সাড়া না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর অধীনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুবাই সরকারের ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং সরকারের পিপিপি কতৃর্পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দুবাইয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং দুবাই চেম্বারের যৌথ উদ্যোগে প্ল্যাটফর্ম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এ পর্যন্ত প্রকল্পটির ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

 

ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত এ প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী ১৬৮.২১ একর জমি অধিগ্রহণ, পুবাইল টেক অফ পয়েন্ট হতে ধীরাশ্রম পর্যন্ত লিংক রেলপথ নির্মাণের জন্য ৫৪.৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, পুবাইল টেক অফ পয়েন্ট হতে ধীরাশ্রম পর্যন্ত ৬.০৯ কিলোমিটার রেলপথ সম্পূর্ণ নতুন নির্মাণ, ৫.৩২ কিলোমিটার লুপ এবং সাইডিং, তিনটি কালভার্ট ও একটি সেতু, দুটি বি শ্রেণির এবং পাঁচটি সি শ্রেণির লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সিগন্যালিংয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদিত হবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পটির আওতায় আইসিডির ভেতরে ব্যালাস্টলেস রেলপথ নির্মাণ, আইসিডির প্রয়োজনীয় অপারেশন ভবন নির্মাণ এবং পূর্ত কাজসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদন হবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট