চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রচুর গরু, বেড়েছে বিক্রি

‘বেপারিরা গরুর দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

সাগরিকা বাজার থেকে ২ লাখ টাকায় গরু কিনে ফিরছিলেন বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ। গরুটি নিয়ে আনন্দ-আহ্লাদে মেতে রয়েছেন তার ভাতিজারা। নূরনগর গরুর বাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় গরু নিয়ে ফিরছিলেন মো. ইসহাক। ৭-৮ জন শিশু-কিশোর গরুটি নিয়ে তাও হই-হুল্লোড় করে বাড়ি ফিরছেন। একই সঙ্গে ৯৫ হাজার টাকায় আরেকটি গরু নিয়ে ফিরছেন ব্যবসায়ী রফিক উল্লাহ।
গতকাল (শুক্রবার) নগরীর নুরনগর হাউজিং মাঠ গরুর বাজার, বিবিরহাট ও সাগরিকা গরুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর গরু রয়েছে। মানুষ সাধ ও সাধ্যমতো গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বেপারিরা গরুর দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন। বাজারে গরু কিনতে এসে সাধ ও সাধ্যের মধ্যের না থাকায় অনেকেই ফিরে গেছেন। অনেকেই এই বাজার ওই বাজার ঘুরেফিরে দেখছেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাগরিকা ও নূরনগর হাউজিং মাঠে বেশি গরু বেচাকেনা হয়েছে। তবে অন্যান্য বাজারেও ভালো বেচাকেনা হয়েছে।
সাগরিকা বাজার কমিটির জামশেদ আলম বলেন, বাজারে প্রচুর গরু রয়েছে। এখনো গরু আসছে। গতকাল (শুক্রবার) ক্রেতাদের ভিড় ছিল। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। আজ (শনিবার) বেচাকেনা আরও জমে ওঠবে। ক্রেতারা বাজারমুখী হয়েছেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে।
কোরবানির গরুর বাজারে বাজারে অনেকেই ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে গরু কিনতে এসেছেন। গরু কিনে দৌড় দৌড়ে বাড়ি ফিরছেন। আর অনেকেই মিনি ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন। নগরীর সবকটি বাজারে বেচাকেনা জমে ওঠেছে। এদিকে ঈদুল আজহার ক্ষণ গণনা প্রায় শেষ। কালবাদে পরশু কোরবানির ঈদ। সময় ঘনিয়ে আসায় পশুর হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকে সবকটি হাট-বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েই চলছে। রাত অবধি বেচাকেনা চলেছে।
কর্ণফুলী বাজারে কথা হয় কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী রহিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি ও তাঁর স্বজনেরা মিলে ৪৫টি গরু এনেছেন বাজারে। সব গরু নিজেদের লালনপালন করা। গতকাল পর্যন্ত ১৭টি গরু বিক্রি করেছেন।
বিবির হাটে কুমিল্লা থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বেপারি ২৫টি এনেছেন। ১৩টি গরু রয়েছে। যশোরের আকবর হোসেন বলেন, ২০-২২ বছর ধরে চট্টগ্রামে গরুর ব্যবসা করে আসছেন। এবার ৪০টি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। আরও ২৮টি গরু রয়েছে। তারা বলেন, চট্টগ্রামে গরু বিক্রি হয় মূলত দু-একদিন আগে। মূল বেচাকেনা হবে আজ-কাল।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি চিকিৎসক টিম, বিভিন্ন ব্যাংকের জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাট-বাজার ইজারাদারের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।
নগরীর সবচেয়ে বড় গরুর বাজার সাগরিকা বাজারে বেচাকেনা বেশি জমে উঠছে। গরু নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। গরু কিনতে পেরে যেন সবার মুখে আনন্দের হাসি। উৎসুখ জনতা বা গরু কিনতে আসা লোকজনও দর-দাম আর দেখাদেখিতে রয়েছেন।
সাগরিকা বাজারের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর বলেন, বিকেলে থেকে বেচাকেনা জমে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার মানুষ বাজারমুখী হয়েছেন। গতকাল (শুক্রবার) বাজার জমে ওঠেছে।
কর্ণফুলী বাজারের ইজারাদাররা বললেন, দুইদিন ধরে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। গতকাল ভালো হয়েছে। ঈদুল আজহার সময় ঘনিয়ে আসায় লোকজনের ভিড় বাড়ছে।
নুরনগর হাউজিং মাঠে এবার ১৫টি গরু এনেছেন সাতকানিয়ার চর চরতির মো. ইউনুছ। মাঝারি ও বড় আকারের গরুগুলো পাড়া-গাঁ থেকে কিনেছেন। একটির দাম ১০ লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন। সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন বিক্রেতারা।
সাগরিকা বাজারে সিরাজগঞ্জের মো. নিজাম উদ্দিন বেপারি বলেন, তিনি এবার ১০টি গরু এনেছেন। সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি করেছেন।
চাপাইনবাবনগঞ্জ থেকে চারদিন আগে সাগরিকা বাজারে ৪০টি গরু নিয়ে এনেছেন বেপারি মো. আলী। তিনি ৭ বছর ধরে এই বাজারে গরু আনছেন। এ পর্যন্ত ২৩টি গরু বিক্রি করেছেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সোমবার থেকে ধীরে ধীরে কোরবানির পশুর বাজার জমে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে বাজার এখন জমজমাট। বেচাকেনায় ফিরেছে বাজারগুলো। ক্রেতাদের দাবি, বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরু দামও বেশি হাঁকাচ্ছেন। বাজারে যেমন ছিল কোরবানির পশু, তেমনি ক্রেতাদেরও ভিড় ছিল। ক্রেতা আর পশুর ভিড় ঠেলে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসতে দেখা যায়।
সাগরিকা বাজারের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর বলেন, সাগরিকা বাজার হচ্ছে দেশের একটি নাম ডাক বাজার। বিভিন্ন জেলার খামারি, বেপারি ও গরু লালন-পালনকারীরা কোরবানিতে এই বাজারের আসার জন্য প্রস্তুত থাকেন। ক্রেতারাও এই বাজার থেকে গরু কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
চট্টগ্রামে স্থানীয় লালন-পালনকারী ও খামারিদের গরু ছাড়াও রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে গরু আনেন। ডেক্সি, পাতিল, বালতি, চাল, ভূষি, খড়-খুটোসহ কয়েকদিনের রান্নাবান্নার সরঞ্জামাদি নিয়ে এসেছেন বেপারিরা।
নগরীর বড় দুটি স্থায়ী গরু বাজার ছাড়াও সিটি কর্পোরেশন ৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে। সবকটি হাটেই কোরবানির পশু বেচাকেনা চলছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট