চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

৬২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন ওয়াসা’র

বোর্ড সভায় ৫৭ বছরে পানির সর্বোচ্চ দাম!

মোহাম্মদ আলী

১০ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ ৬২ শতাংশ পানির দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর আগে ২০১৭ সালে সেবা সংস্থাটি একবার ১৬ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করেছিল। অন্যান্যবার শুধুমাত্র ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল (শুক্রবার) চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড সভায় আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সার স্থলে ১৬ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এর আগে চলতি বছর জানুয়ারিতে ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করেছিল ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সেবা সংস্থাটি।
পানির দাম বৃদ্ধির অনুমোদন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে অনুমোদন হলে নতুন দাম কার্যকর হবে।
সভায় আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১৬ টাকা ও বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে বাণিজ্যিকে ৫ টাকা কমিয়ে সেটি ৪০ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।
চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৬ টাকা। বিক্রি হচ্ছে এর কম দামে। সরকার এ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম পানির দাম বাড়ানো যায় কিনা খতিয়ে দেখতে বলেন। এজন্য উৎপাদন ব্যয় অনুযায়ী দাম রাখার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে’।
তিনি বলেন, আগে ভূ-গর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলন করতো ওয়াসা। এখন ভূ-উপরিস্থ পানির দিকে ঝুঁকছে। ভূ-উপরিস্থ পানি আলাদাভাবে শোধন করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ পানির দাম আগের মতো।
প্রসঙ্গত, ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে ওয়াসা বোর্ড। সে অনুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি থেকে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল ওয়াসা। অথচ ৬ মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার পানির দাম গড়ে প্রায় ৬২ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে ওয়াসা বোর্ড।
এদিকে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কন জিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, গ্রাহকের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সংস্থাটি সেবার মান না বাড়িয়ে কিছুদিন পরপর পানির দাম বাড়াচ্ছে।
‘সিস্টেম লস, লিকেজের কারণে অনেক টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়াসা। সেদিকে নজর না দিয়ে গ্রাহকের ঘাড়ে বোঝা তুলে দিচ্ছে সংস্থাটি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ বছরে সংস্থাটি সাত দফা পানির দাম বাড়িয়েছে। ২০১৩ সালে আবাসিকে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির মূল্য ছিল ৬ টাকা ৫১ পয়সা। ২০১৯ সালে সমপরিমাণ পানির দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯ টাকা ৯২ পয়সা। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ১৮ টাকা ৪৮ পয়সা। ২০১৯ সালে হয়েছে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা। এর আগে ওয়াসার আবাসিকে প্রতি ইউনিটের (এক হাজার লিটার) মূল্য ছিল ৯ টাকা ৪৫ পয়সা। ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে প্রতি ইউনিটে মূল্য কার্যকর করা হয়েছে ৯ টাকা ৯২ পয়সা। অপরদিকে বাণিজ্যিকে প্রতি ইউনিটে ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা রেকর্ড পরিমাণ ১৬ শতাংশ পানির দাম বৃদ্ধি করে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটিই সেবারে ওয়াসার সর্বোচ্চ পানির দাম বৃদ্ধি। দাম বৃদ্ধির কারণে তখন আবাসিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম এক দশমিক ৩৯ টাকা বাড়িয়ে নয় টাকা এবং অনাবাসিক (শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে) সংযোগে তিন দশমিক ৪৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা। এর আগে ২০১৬ সালে পানির দাম ছিল আবাসিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ৭ দশমিক ৬১ টাকা। অনাবাসিক (শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে) সংযোগে ২১ দশমিক ৫৬ টাকা।
ওয়াসার সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর ওয়াসা নিজস্ব আইনে প্রতিবছর পানির দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে আসছে। এর বাইরে অতিরিক্ত বাড়াতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ২০১৭ সালে পানির অতিরিক্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠালে মন্ত্রণালয় ১৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট