চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাংবাদিকদের সাথে এমপি বাদল

ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু না হলে সংসদকে সালাম

আমার মৃত মা-বাবাকে গালি দেয়া থেকে আমি মুক্তি চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশে হাজার হাজার সেতু হয়েছে। এমন অনেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে সারাদিনে তিনটি গরুর গাড়িও পার হয় না। তারপরেও সরকার সেসব এলাকায় ব্রিজ করেছে। মনে দুঃখ লাগে, এই কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ হেঁটে পার হয়। গাড়ি নিয়ে পার হওয়ার সময় ২-৩ ঘণ্টা অপক্ষো করতে হয়। এসময় মানুষ আমার মৃত মা-বাবাকে গালি দেয়। এর থেকে আমি মুক্তি চাই। মানুষ তো জানে না এই সেতুর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে গত ১০ বছরে কয়বার বলেছি।’ গতকাল শুক্রবার কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের দাবিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। চট্টগ্রাম ক্লাবে আয়োজিত সভায় সংসদ সদস্য আরো বলেন, এ সেতু নিয়ে চারবার সমীক্ষা হয়েছে। কোরিয়ান কোম্পানি চূড়ান্ত সমীক্ষা করেছে। রেলওয়ের ধারণা

ছিল এই সেতুতে ৮০০ কোটি টাকা লাগবে। কোরিয়ানরা বলেছিল ১২০০ কোটি টাকা লাগবে। তারা ৮০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়। সরকারকে দিতে হবে ৩৭৯ কোটি। এই ব্রিজ সম্পর্কে বাংলাদেশের পরিকল্পনাবিদরা বলেছিল, এটা অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। তারপরও কেন এই সেতু হচ্ছে না, তা আমার বোধগম্য নয়। ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য বলেন, আমি এখন জীবনসায়াহ্নে এসে পৌঁছেছি। গত ১০ বছর কম করে হলেও ২০ বার সংসদে সেতুর কথা বলেছি। এখন কালুরঘাট সেতু (রেলসেতু) যে অবস্থায় আছে, সেটার ওপর দিয়ে মাত্র দুই থেকে তিনটি ট্রেন চলে। দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েল যায়। আর একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন যায়, আরেকটা আসে। সেই ট্রেনগুলো মাত্রা আড়াই মাইল বেগে চলে, কখন ব্রিজ ভেঙ্গে পড়বে এই ভয়ে। আমি বলতে চাই, ব্রিজ আর কতটা ভাঙলে নতুন করে বানানো হবে?’
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেললাইন প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, ‘বারবার বলছি, কালুরঘাটে সড়কসহ রেলসেতু না করলে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন বানিয়ে কোনো লাভ হবে না। ট্রেন কি বোয়ালখালীর গোমদ-ী পর্যন্ত আসার পর লাফ দিয়ে শহরে যাবে? ট্রেন যেতে না পারলে সেই রেললাইন বানিয়ে লাভ কী? সবার আগে দরকার ছিল কালুরঘাট সেতু। সেটি বানানোর পর আস্তে আস্তে রেললাইন এগিয়ে নেওয়া দরকার ছিল। অথচ এখন প্রথমে বানাচ্ছে রেলস্টেশন, তারপর রেললাইন। আর কালুরঘাট সেতুর কোনো খবর নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ^াস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৫-২৬ রমজানে আমি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনি কেন এসেছেন। কথার প্রসঙ্গে আমি কি কাজে এসেছি প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে আমি বলি, আপনার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই, শুধু ব্রিজটা করে দিলে হবে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনার ব্রিজ আমি করে দেব। কিন্তু দুঃখের বিষয় এরপরও হচ্ছে না।
ব্রিজের প্রয়োজনে দল ছাড়তে রাজি জানিয়ে এমপি আরো বলেন, আমি সরকারি জোটের এমপি, ব্রিজের জন্য যদি আমাকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে হয়, প্রয়োজনে সেটাও করতে রাজি আছি। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ না হলে আমি সংসদকে সালাম (বিদায়) দিয়ে চলে আসবো।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিনিয়র সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ফারুক ইকবাল, মুস্তফা নঈম ও শহিদুল্লাহ শাহরিয়ার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট