চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

গভীর সংকটে ২০০ ফিশিং ভেসেল

মোহাম্মদ আলী

২৮ আগস্ট, ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে গভীর সংকটে পড়েছে ২০০ ফিশিং ভেসেল। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। তাতে খরচও তুলতে পারছেন না ফিশিং ভেসেল মালিকরা। তাই সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ রক্ষায় হ্রাসকৃত মূল্যে তেল সরবরাহ করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে বড় তিনটি খরচ হচ্ছে জ্বালানি, জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও নাবিদের বেতন-ভাতা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ খরচ হচ্ছে জ্বালানি। ফিশিং ভেসেলগুলো ৩০ দিনের জন্য মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে যায়। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে ফিশিং ভেসেলে প্রতি ট্রিপে খরচ হতো ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দেশে ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করলে এক লাফে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ লাখ থেকে এক কোটি ৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরের শুরুতে ডিজেলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ৬৫ টাকা। তখন একটি বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের জাহাজে ডিজেল প্রয়োজন হতো ৫২ লক্ষ টাকা। একই মাসের ৩ নভেম্বর ডিজেলের মূল্য ৮০ টাকা করা হলে খরচ বেড়ে হয় এক লাফে ৭২ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে খরচ বাড়ে ২০ লাখ টাকা। অথচ সেভাবে বাড়েনি বাজারে মাছের দাম। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ। আর্থিক ক্ষতির কারণে অনেকে সাগরে ট্রলার পাঠানো থেকে বিরত থাকছে বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণ প্রক্রিয়াটি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে জ্বালানি তেলের উপর সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ওই দেশসমূহ অন্যান্য সুবিধাও দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোন সুবিধা প্রদান করা হয় না।

সমুদ্রে ফিশিং ভেসেল পরিচালনা করে মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন’। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে সম্প্রতি একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের ৮০ সদস্য প্রতিষ্ঠানে ফিশিং ভেসেল রয়েছে ২০০টি। এসব ফিশিং ভেসেলের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য ও চিংড়ি আহরণ করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মাধ্যমে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে ফিশিং ভেসেলগুলো। জিডিপিতে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ মাছের উৎপাদনের ভূমিকা রয়েছে।

 

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের (বিএমএফএ) মহাসচিব মো. মশিউর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ফিশিং ভেসেল একবার সাগরে গেলে যে পরিমাণ খরচ হয়, তার ৭০ শতাংশ খরচ হয় জ্বালানি খাতে। তাতে গত ৫ আগস্ট ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে শুধু জ্বালানি খাতে খরচ বেড়েছে ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে বাড়েনি মাছের দাম। অথচ থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার জ্বালানি খাতে সাবসিডি দেয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি খাতে সাবসিডি অথবা ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ করে দিলে রক্ষা পাবে এ শিল্প। অন্যথা আর্থিক লোকসানের কারণে ফিশিং ভেসেলে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের (বিএমএফএ) প্রেসিডেন্ট নূরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ মাস প্রায় ৪ মাস ও সরকারের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়কাল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন এবং ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ২২ দিন মিলে সর্বমোট ৮৭ দিনসহ বছরে ২০০ দিন সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করা যায় না। এ কারণে বছরে সর্বোচ্চ ১৬০ থেকে ১৭০ দিন সমুদ্রে মৎস্য আহরণের সুযোগ থাকে। বছরে প্রায় ২০০ দিন জাহাজগুলো জেটিতে অলস বসে থাকে। বিপরীতে ব্যাংক ঋণের কঠিন শর্তাবলী অনুসরণ করে অন্যান্য শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো ৩৬৫ দিনের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

 

এছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত জাহাজ পরিচালনা ব্যয় বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্য, নাবিকদের বেতনভাতা, মেরামত খরচ, পোর্ট চার্জ, রিভার চার্জ, মৎস্য অবতরণ ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া সরকার করোনা মোকাবেলায় অন্যান্য খাতে প্রণোদনা দিলেও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে কোনো ধরনের সহায়তা দেয়নি। ফলে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের সদস্যরা। এ অবস্থায় ফিশিং আহরণ খাতে ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডিজেলের মূল্য লিটারে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে সরবরাহ করলে দেশের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ খাতটি রক্ষা পাবে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট