চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এলুমিনিয়ামের তৈজসপত্রের উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২২ আগস্ট, ২০২২ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে এলুমিনিয়ামের তৈরি তৈজসপত্রের উৎপাদন তিন বছরের ব্যবধানে কমেছে অর্ধেকের বেশি। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্য তৈরিতে লাভের মুখ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। তিন বছরে ১১০টি কারখানা থেকে বন্ধ হয়ে বর্তমানে মাত্র ৭০ টি চালু রয়েছে। আরো কিছু কারখানা বন্ধের পথে বলে জানান এলুমিনিয়াম ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা।

এলুমিনিয়াম কারখানাগুলো বৃটিশ আমল থেকে নগরীর মুরাদপুর অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত। একসময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে এলুমিনিয়ামের একচ্ছত্র ব্যবসা ছিল এই মুরাদপুরে। কিন্তু সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। একাধিক মালিকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, করোনার মধ্যে এখানে প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি আর্থিত ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি অনেক ব্যবসায়ী কাটিয়ে উঠতে পারেননি। যার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এলুমিনিয়াম কারখানায় কাজের সাথে মালিক-শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই হাজার লোক। এছাড়া একসময় এখানে দৈনন্দিন সংসারিক জীবনের প্রায় ১৬ রকমের বেশি পণ্য তৈরি হত। এখন কমে ১০-১১ রকমের কম পণ্য তৈরি হচ্ছে। সেগুলোর চাহিদাও আগের মত নেই।

উৎপাদন কমার বিষয়ে চট্টগ্রাম এলুমিনিয়াম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, এলুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল ইংগট, গ্রিস, সরিষাতেল ও রোলিংয়ের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পরবর্তীতে কারখানা চালু করলে অর্থের অভাবে অনেকেই ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেননি।

তিনি আরো বলেন, করোনায় ব্যবসায়ীদেরকে সরকারি প্রণোদনা দিয়েছেন ঠিকই। তবে এ প্রণোদনা সবাই পাননি। কারণ ঋণ দেয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ ব্যাংকের হাতে ছিল। তারা ঋণ দিতে গিয়ে শুধু তাদেরই ঋণ দিয়েছেন, যারা আগে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং সঠিক সময়ে সেই ঋণ পরিষদ করেছেন এমন ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে যাদের সিআইবি’র রিপোর্ট ভালো ছিল তাদেরকেই মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম এলুমিনিয়াম শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল্লার দান এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারি হাজি মো. চুন্নু মিয়া বলেন, এক সময় সারাদেশে চট্টগ্রামের এলুমিনিয়ামের বেশ চাহিদা ছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মায়ও এখানের তৈরি পণ্য রপ্তানি হত। সেসময় চট্টগ্রামে দিনে ৪০- ৫০ টন পণ্য তৈরি হত। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন কমে এখন প্রতিদিন ২৫ টনের কম এলুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরি হচ্ছে। পণ্যের চাহিদা কমার আরো একটি কারণ এখন ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এলুমিনিয়ামের কারখানা গড়ে উঠেছে। এ কারণে চট্টগ্রামের পণ্য এখন বড়জোর মিরসরাই পর্যন্ত যায়।

তিনি আরো বলেন, এখন এলুমিনিয়ামে হাঁড়িপাতিলের জায়গা দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন রকমের আধুনিক তৈজসপত্র। এসব পণ্যগুলোর মধ্যে স্টিক, নন স্টিক ফ্রাইপেন, স্টিক কড়াই, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ইলেকট্রনিক হাঁড়িপাতিলসহ কিছু আধুনিক হাঁড়িপাতিল।

আমজাদ এলুমিনিয়াম কারখানার স্বত্বাধিকারি ইউসুফ আমজাদ বলেন, এখন দিনে তৈজসপত্র উৎপাদন হচ্ছে বড়জোর ২০ থেকে ২৫ হাজার কেজি (২০-২৫ টন)। বছরে যার পরিমাণ দুই লাখ ৪০ হাজার কেজি। কিন্তু আগে দৈনিক পণ্য তৈরি হত ৪০-৫০ হাজার কেজি। বছরে উৎপাদন হত পাঁচ লাখের বেশি। এ কারণে এখানকার কারখানার মালিকদের অবস্থা খুব খারাপ। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো কারখানা বন্ধ হচ্ছে। মূলত এলুমিনিয়ামের পণ্য তৈরির কাঁচামাল ইংগটের দাম বেশি হওয়ায় এখন পণ্য তৈরিতে এটির ব্যবহার হচ্ছে না বললেই চলে। যে কারণে পণ্যের মান খারাপ।

তিনি বলেন, আগে প্রতিকেজি ইংগট ছিল ২৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকায়। প্রতি টন সরিষা তেল ১৬শ’ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২শ’ টাকায়। গ্রিজের দাম ১৮ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার টাকায়।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট