২১ আগস্ট, ২০২২ | ৩:১১ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পরীক্ষা দিতে এসেছেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ।
সোমবার (২২ আগস্ট) সমাজবিজ্ঞান, আইন ও শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
বেলায়েত শেখ জানান, ‘পরীক্ষা দিতে আজ সকালে ক্যাম্পাসে এসেছি। আগামীকাল বিকালে ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা দেব। এখন আপাতত এক ছোট ভাইয়ের বাসায় আছি। পরে স্যার এএফ রহমান হলে উঠব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হই। এছাড়া ডায়াবেটিস থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে আমি অসুস্থ। তবুও মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার আশা আছে।’
গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা বেলায়েত শেখ। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় লেখাপড়া করার প্রবল মনোবল আর ইচ্ছে থাকলেও ছোটবেলা থেকে অসুস্থ বাবার সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাকে। কখনো দিনমজুর, কখনো হোটেল বয়, আবার কখনো গ্যারেজের টুকিটাকি কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বৃদ্ধ বাবা ও অসুস্থ মায়ের সেবা করেছেন তিনি। এর জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি বেলায়েত শেখ। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। একে একে পরীক্ষা দিয়েছেন ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এখনো পর্যন্ত কোথাও সাফল্য মেলেনি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বেলায়েত শেখের বাড়ি। দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। বড় ছেলে বিয়ে করে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। একমাত্র মেয়েকে গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে দেন বেলায়েত।
তবে কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বেলায়েত। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। নিজের ছেলে-মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চেয়েছিলাম, সেখানেও ব্যর্থ হই। পরে ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নিজেই লেখাপড়া শুরু করি। প্রথমে আশেপাশের মানুষজন হাসি-ঠাট্টা করত। তবে একটা সময় গিয়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়। আমি নিজেকে বয়স্ক ভাবি না, যুবক ভাবি।
পূর্বকোণ/রায়হান/সালমান/এএইচ