চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

একান্ত সাক্ষাৎকারে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি

এমনভাবে কাজ করছি একশ’ বছরেও হাত দিতে হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ আগস্ট, ২০২২ | ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাইলাজেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা একটি নতুন প্রকল্পে হাত দিয়েছি। বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ বা বিডিএস। পটুয়াখালী জেলা সদরের একটি মৌজায় এই জরিপ করা হবে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এই জরিপকে বেস লাইন ধরে সারাদেশে তা বাস্তবায়ন করবে ভূমি মন্ত্রণালয়।

আগামী একশ’ বছরেও আর সার্ভে করতে হবে না জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সর্বশেষ ডিজিটাল সার্ভে হচ্ছে বেইজ ল্যান্ড। আমরা এমনভাবে কাজ করছি, আগামী ১০০ বছরেও আর সার্ভে করার প্রয়োজন হবে না। আমরা যদি জরিপ ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারি, জায়গা-জমি নিয়ে মামলা-মোকাদ্দেমা সেভাবে থাকবে না। বর্তমানের তুলনায় অনেক কমে আসবে। সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পও মামলার কারণে আটকে যায়, অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।

চলমান পাইলটিং প্রকল্প শেষ হতে দুই থেকে আড়াই বছর লাগতে পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের জরিপ যেটা শুরু হচ্ছে, সেটা পাইলট প্রকল্প। আমাদের আশা রয়েছে সারাদেশে যখন কাজ শুরু হবে, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দিয়েই উদ্বোধন করবো। এই পাইলটিং প্রকল্প সম্পন্ন করতে আমাদের দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।

ডিজিটাল সার্ভে কাজে অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে ডিজিটাল সার্ভে সিস্টেম ছিল না, সেখানে সার্ভে করতে ২০ বছরও লেগেছে। আজ ডিজিটাল সিস্টেম হওয়ায় আমরা বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরকে যুক্ত করেছি, তারা জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, ১৫ দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট পাবো। আমাদের রিপোর্টগুলো হবে প্রায় ১০০ ভাগ সঠিক।

চট্টগ্রামসহ কয়েকটি মেট্রোপলিটন এলাকায় ডিজিটাল সার্ভের কাজ শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ কয়েকটি মেট্রোপলিটন এলাকায় ডিজিটাল সার্ভের কাজ শুরু হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়কে স্বচ্ছ রাখতে আমরা কল সেন্টার চালু করেছি, সেখানে আসা বিভিন্ন অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ক্লিন ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়ে মানুষের নেগেটিভ ধারণা ছিল। মানুষের সেই ধারণা আমরা পরিবর্তন করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয়কে ক্লিন করেছি এবং এখন সেখানে একটি ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ফিল্ড লেভেলে এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে। যখন যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি, সেখানে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের সবাই মিলে এসব মনিটরিং করছি। কাজ করার জন্য আমরা একটি টিম বিল্ডআপ করেছি। মূল কথা হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়কে একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমি এখানে সম্মান কামাতে এসেছি, কমাতে নয়। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার কাজ হচ্ছে নেত্রীর দেয়া দায়িত্ব পালন করা এবং সম্মান নিয়ে এখান থেকে বিদায় নেওয়া। এর চেয়ে বেশি চাওয়া-পাওয়া আমার নেই।

আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়কে একটি প্রোগ্রামের মধ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ইমিউটেশন (নামজারি) এবং ল্যান্ড টেক্স হয়ে গেছে। ইমিউটেশনের জন্য আমি জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস পুরস্কারও পেয়েছি। বাংলাদেশ এই প্রথম ইমিউটেশন সার্ভিসের জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া, ল্যান্ড টেক্সের জন্য জাতিসংঘের আরো একটি পুরস্কার পেয়েছি। এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে না। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। সাধারণ মানুষ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে, সেটা যাচাই-বাছাই করে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর একটি এওয়ার্ড পেয়েছি। সেটাও অনেক সম্মানের।

উল্লেখ্য, ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারায় ভূমি মন্ত্রণালয় ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ (ডেভেলপিং ট্রান্সপ্যারেন্ট এন্ড একাউন্টেবল পাবলিক ইনস্টিটিউশনস) ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস এওয়ার্ড ও জাতিসংঘ জনসেবা পুরস্কার ২০২০ অর্জন করে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট