চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আক্রান্ত ৪০ শতাংশের শরীরে কলেরার জীবাণু

ইমাম হোসাইন রাজু

১৮ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকসার্স ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের প্রায় ৪০ শতাংশের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের কাছ থেকে সংগ্রহকৃত নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে এমন তথ্য ওঠে আসে। যাদের প্রত্যেকের শরীরে ডায়রিয়ার সংক্রামক ছাড়াও ‘ভিব্রিও কলেরা’ নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামক শনাক্ত হয়েছে। তবে বাকি সকলেই শুধুমাত্র ডায়রিয়ার সংক্রামকে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন চিকিৎসকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালিশহর-ইপিজেড-পতেঙ্গা ও তৎসন্নিহিত এলাকা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগের শরীরে ডায়রিয়ার পাশাপাশি কলেরার জীবাণু পাওয়া যায়। তবে সকলের শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, কলেরা হচ্ছে ‘ভিব্রিও কলেরা’ নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ। এ ব্যাধি উপসর্গবিহীন অথবা মৃদু অথবা মারাত্মক হতে পারে। কলেরার প্রধান উপসর্গ হল ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এছাড়া থাকতে পারে পেটব্যথা, জলাভাবে শারীরিক দুর্বলতা এবং চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় থাকলে শেষ পর্যন্ত পানিশূন্যতার কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে।

ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকসার্স ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, নমুনা সংগ্রহ করার পর পরীক্ষা করে দেখা হয় তাদের শরীরে ডায়রিয়া ছাড়াও অন্য কোন জীবাণু আছে কি-না। পরীক্ষায় তাদের মধ্যে ৭ জনের শরীরে ‘ভিব্রিও কলেরা’ নামক ব্যাকটেরিয়া বা কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। আমরা নতুন করে আরও আক্রান্তদের নমুনাও সংগ্রহ করবো। তাদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এর বাইরে আর কোন জীবাণু আছে কি-না।’

২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ৫৫ জন : বিশেষায়িত বিআইটিআইডি হাসপাতালে গেল ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে শিশুসহ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষও আছেন। তারা সকলেই হালিশহর-ইপিজেড-পতেঙ্গা ও তৎসন্নিহিত এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে গেল তিনদিনে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বিশেষায়িত এ হাসপাতালটিতে। যদিও তাদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাড়ি ফিরলেও বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর শয্যার চেয়ে বেশি রোগী থাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত এসব রোগীদের ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, একসঙ্গে এত রোগীর চাপ সামলানো কঠিন। যার কারণে শয্যার বাইরেও রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়নি। মোটামুটি সবাই ভালো রয়েছেন।

প্রসঙ্গত : গত সোমবার থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে নগরীর হালিশহর-ইপিজেড-পতেঙ্গা ও তৎসংলগ্ন এলাকাজুড়ে। গত তিনদিনে এসব এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বিআইটিআইডি হাসপাতালে। পাতলা পায়খানার সঙ্গে বেশিরভাগ রোগীরই বমি হচ্ছে। দূষিত পানির কারণেই এসব এলাকায় বারবার পানিবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব এলাকায় মাস দুয়েক আগেও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট