চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

কাউন্সিলর মোরশেদের মহতি উদ্যোগ

শুলকবহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে মিলছে পথশিশুদের আহার

৮নং শুলকবহর ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ মে, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

পথের ধূলায় লুটিয়ে কেন লক্ষ শিশুরা কাঁদে/ ক্ষুধা পিপাসায় কেন মরে ওরা বল কোন অপরাধে/ আমরা পথে শিশুকে বুকে তুলে নিব দূর হবে লাঞ্ছনা/ শিশুর জীবন থাকবে না বঞ্চনা। কবিতার এই অংশকে মূলমন্ত্র করে পথশিশুদের বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছের ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম। মূলত তার ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলিতে ক্রেতারা খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া ভাল খাবার সংগ্রহ করে তিনি পথশিশুদের জন্য তার ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়ে আসছেন। গত তিন দিন আগে থেকে শুরু হওয়া এই মানবিক উদ্যোগে দুঃস্থ অসহায় পথ-শিশুদের মুখে জুটছে আহার।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর মোরশেদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের সমাজে সুবিধাভোগী সন্তানরা হাজারো সম্ভাবনার মাঝে বেড়ে উঠে। তারা স্কুলে যায়, খেলায় মেতে উঠে। সময়মাফিক খাবার খায়, আবার কখন নষ্টও করে। ঠিক সেই সময় পথে প্রান্তরে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে এসকল দৃশ্য অবলোকন করে আমাদের চারপাশে নিগৃহিত, অবহেলায় থাকা সমাজের অসহায়, দুঃস্থ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। দুমুঠো খাবার মুখে দিতে তারা নেমে পড়ে জীবন সংগ্রামে। তাদের কেউ কেউ এই তপ্ত রোদে বিক্রি করে দৈনিক পত্রিকা। কেউ বাজারের ব্যাগ বহন করে। কেউবা ক্ষুধার যন্ত্রণায় নামছে ভিক্ষাবৃত্তিতে। আমরা হয়তো আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে এই শিশুদের দিকে ক্ষনিকের জন্য থাকাই। কিন্তু কখনোই জানতে চাইনা বা জানার ইচ্ছে জাগে না এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনের গল্প। অনেকের মা আছে আবার কারো বা নেই, নেই কোন পারিবারিক বন্ধনও। কেউ ভাবে না তারা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে বা কি খাচ্ছে। এসব অসহায় শিশুরাও মানব সন্তান। শৈশব থেকে কঠিন এক বাস্তবতার মাঝে এরা বেড়ে উঠে। দু’মুঠো ভাতের জন্য এই বয়সে তাদের করতে হয় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। আবার অনেকেই ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে খাবার খায়। যা আমাকে ভাবিয়ে তুলে। শুধু সরকারের একক প্রচেষ্টায় এদের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের সচেতন বিত্তশালী মানুষদের একটু ভাবার। কিছু ছোট ছোট উদ্যোগ নেয়ার। এসব উদ্যোগে বিশেষ কোন খরচ নেই। এখানে শুধুমাত্র প্রয়োজন আন্তরিকতা।
কাউন্সিলর মোরশেদ বলেন, তার ওয়ার্ডে যেসব রেস্টুরেন্ট আছে তার মালিকদের সাথে মতবিনিময় করে পথশিশুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি তাদেরকে একটি কথা বলেছেন। ক্রেতারা যখন খাবার খান, তখন প্রতি টেবিলে কিছু না কিছু খাবার বেঁচে যায়। এই বেঁচে যাওয়া খাবার ডাস্টবিনে ফেললে তা আবর্জনায় পরিণত হয়। পথশিশুরা ডাস্টবিন থেকে সেসব খাবার কুড়িয়ে খায়। এসব বেঁচে যাওয়া খাবার ডাস্টবিনে ফেলে না দিলে তা ভাল থাকে। পথশিশুরা খেতে পারে। আমার প্রস্তাবে রেস্টুরেন্ট মালিকরা রাজি হয়ে যান। বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক বিবেচনা করে রেস্টুরেন্ট মালিকরা টেবিলের বেঁচে যাওয়া খাবার নয়, একদম ফ্রেশ খাবার দেয়ার প্রস্তাব দেন। তার ওয়ার্ডের অন্তত ২৫টি রেস্টুরেন্ট এখন প্রতিদিন দুপুরে খাবার দেন। গতকালও ৬৫ জন খেয়েছিল। তবে সংখ্যাটি ৮০ জন পর্যন্ত হতে পারবে। কোন কোন রেস্টুরেন্ট মালিক দুই বেলা খাবার দিতেও রাজি হয়েছেন। তার ওয়ার্ডে বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারের মালিকদের সাথেও বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সময় কমিউনিটি সেন্টারগুলি খাবার বেঁচে যায়। খাওয়ার লোক থাকে না। এই ধরনের খাবার সংগ্রহেরর পরিকল্পনা আছে। তবে তার আগে বড় একটি ডিপ ফ্রিজ সংগ্রহ করতে হবে। কারণ একসাথে বেশি খাবার পাওয়া গেলে তা ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। নতুবা নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সারাদেশে যদি এক লাখ রেস্টুরেন্ট থাকে এবং সব রেস্টেুরেন্ট যদি তাদের বেঁচে যাওয়া খাবার পথশিশু এবং অভুক্তদের খেতে দেয় তাহলে এদেশে পথশিশুরাও ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। তারা ভুল পথে পা বাড়াবে না। ভিক্ষা করবে না।
এই কর্মসূচিতে আপাতত প্রতিদিন দুপুরে তার ওয়ার্ড অফিসে পথশিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হবে। প্রথমে তাদেরকে খাবার দিয়ে প্রতিদিন ওয়ার্ড অফিসে আসার অভ্যাস গড়ে তোলা হচ্ছে। মাস খানেক ভাত খাওয়ানোর পর ধীরে ধীরে তাদের লেখাপড়ার দিকে ধাবিত করা হবে। অন্তত পক্ষে অক্ষরজ্ঞান তাদের দেয়া হবে। খাবার খাওয়ার আগে বা পরে ঘন্টাখানেক লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে। যদি শুরু থেকেই তাদের লেখাপড়ার কথা বলা হয়, তাহলে তারা খাবার খেতে আসবে না। তাই প্রথম এক মাস তাদেরকে শুধুই খাবার দেব। লেখাপড়ার চাপ দেব না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট