চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কখনো তিনি ব্রিগেডিয়ার কখনো স্থপতি

নাজিম মুহাম্মদ

১৫ আগস্ট, ২০২২ | ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

তার পড়াশোনা এইচএসসি। তবে নিজেকে তিনি কখনো স্থপতি আবার কখনো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোগো দিয়ে ছাপানো তার ভিজিটিং কার্ডও রয়েছে। নামের জায়গায় লিখা রয়েছে ঋতুরাজ সেনগুপ্ত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, এমইএস স্টাফ অব কন্ট্রোল, চিফ অব আর্মস কন্ট্রোল, হেড অব এসটিএফ, চট্টগ্রাম ডিভিশন,পিপিএম,পিএম,এসটিএম।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ব্যাজ সম্বলিত পোশাক পরা ছবিও রয়েছে শুভ মল্লিকের। ছবিতে পোশাকের বুকে লিখা রয়েছে ‘ঋতুরাজ’।

মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস (এমইএস) থেকে টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া, সেনা সদরে চাকরি দেয়া ইত্যাদির কথা বলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। ভিজিটিং কার্ডে ঋতুরাজ সেনগুপ্ত হিসাবে নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিলেও প্রতারক এ যুবকের প্রকৃত নাম শুভ মল্লিক। তিনি পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের দক্ষিণ বাকখাইন গ্রামের মৃত অনুপম মল্লিকের ছেলে।

সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে হিসাব রক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, এপিএস, রিসিপসনিস্টসহ বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেয়ার নামে পরীক্ষার খরচের কথা বলে ১৫ জনের কাছ থেকে বিকাশে ৭৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন শুভ। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের মাধ্যমে তিনি এ টাকা নেন। ওই অধ্যাপক মামলা দায়ের করলে খুলশী থানা পুলিশ গত শনিবার রাতে আকবরশাহ উত্তর কাট্টলী এলাকা থেকে কথিত ভুয়া ব্রিগেডিয়ার শুভ মল্লিক ওরফে ঋতুরাজ সেনগুপ্তকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রেপ্তারের কথা শুনে ৬/৭জন ভুক্তভোগী খুলশী থানায় আসেন গতকাল (রবিবার)। তাদেরই একজন সদরঘাট থানার শাহজাহান মার্কেটের ব্যবসায়ী বিবেক সরকার।

 

তিনি জানান, শুভর সাথে তার বেশ কয়েকমাস আগে পরিচয়। নিয়মিত তার দোকানে যেতেন। নিজেকে ব্রিগেডিয়ার ঋতুরাজ সেন গুপ্ত হিসাবে পরিচয় দিতেন। কয়েকমাস আগে তিনি জানান, সেনা সদর দপ্তরে ‘সিভিল ডিরেক্ট অফিসার’ পদে লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। শুভ মল্লিকের পরামর্শ অনুযায়ী বিবেক তার স্ত্রীর বায়োডাটা ও আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র জমা দেন। বিবেকের কাছে যথারীতি তার স্ত্রীর এডমিট কার্ডও পাঠানো হয়। এডমিট কার্ডে দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল নিয়োগ পরীক্ষা হবার কথা ছিল। এরমধ্যে অফিস খরচের নামে কয়েক দফায় বিবেকের কাছ থেকে ৪৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন শুভ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ মল্লিক ওরফে ঋতুরাজ জানান, বিএফ শাহীন কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএচসি পাস করেন। তারপর আর পড়াশোনা করেননি। নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মাঠ সংলগ্ন সেনাবাহিনীর এমইএস অফিসে যেতেন। লোকজন যাতে মনে করে ওই অফিসের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।

শুভ জানান, আমার কোন ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা নিতাম। তাই মাঝে মাঝে ওখানে যেতাম। যাতে লোকজন মনে করে সেনাবাহিনীর ওই অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।

খুলশী থানার পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের দায়ের করা মামলায় প্রতারক ‘ঋতুরাজ সেনগুপ্ত’কে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পোশাক পরা ছবি ও ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে। তবে সে জানিয়েছে পোশাক পরা ছবিটি ফটোশপে এডিট করেছে। শুভ মল্লিক ওরফে ঋতুরাজ সেনগুপ্তকে আদালতে পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

 

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট