চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উপজেলাগুলোতে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

পূর্বকোণ ডেস্ক

৭ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার বিভিন্নস্থানে নতুন করে আরও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর আসছে। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদ দেয়া হল।
সাতকানিয়া : আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সাতকানিয়ায় বিগত ২১ দিনে ১৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পর আবারও নতুন করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ও সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি ল্যাবে ২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সাতকানিয়ায় গত ২২ দিনে সর্বমোট ২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে এদের মধ্যে কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য

কমপ্লেক্স অথবা বেসরকারি কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাই। অন্যদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সচেতনতামূলক সভা অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাংসদ ড. আবু রেজা নদভী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতন ও সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা যায়, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর সাতকানিয়ায় ২১ দিনে ১৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ও সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি ল্যাবে নতুন করে আরো ২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিগত ২২ দিনে সাতকানিয়ায় সর্বমোটে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে গতকাল শনাক্তকৃতদের মধ্যে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড রোজমর পাড়ার আবদুর শুক্কুরের ছেলে মো. রিদুয়ান (১৯) ও সাতকানিয়া সদরের স্টার ল্যাবে শনাক্ত হয়েছে মাদার্শা ইউনিয়নের বজল চেয়ারম্যান বাড়ির কামাল হোসেনের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (১৮)।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন জানান, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কর্নার করেছি। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া আমরা প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সচেতনতামূলক সভা করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্টার ল্যাবে ২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সর্বমোট সাতকানিয়ায় ২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে শনাক্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার কথা বললেও তারা চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাংসদ ড. আবু রেজা নদভী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমি খবর নিয়ে দেখেছি তারা নির্দেশনা মোতাবেক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমিও ডেঙ্গু নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে মাঠে নামবো।
রাঙামাটি অফিস : আমাদের পূর্বকোণ প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭ জনকে শনাক্ত করা গেছে। বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন ৭ জন। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করতে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আপদকালীন ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বরাদ্দের প্রত্যেক উপজেলায় ১ লাখ টাকা করে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী জগদীশ চাকমা। গতকাল মঙ্গলবার তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভূগছিলেন তিনি। সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সন্ধ্যায় রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে তার। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢাকায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন রাঙামাটির চৈতি চাকমা। তিনি বলেন, পড়ালেখার কারণে ঢাকায় থাকতেন। বাড়ি গিয়ে আক্রান্ত হন জ্বরে। হাসপাতালে গিয়ে ভর্তির পর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে তার। এখন রাঙামাটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১০ রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। এ নিয়ে রাঙামাটিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে ৭ জন বাড়ি ফিরে গেছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় রক্ত পরীক্ষাসহ জেলাব্যাপী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
উখিয়া : আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের উখিয়ায় গত এক সপ্তাহে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। এদের ৪ জন স্থানীয় ও ১ জন উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা। এ রোগ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। তবে ডাক্তাররা জানান, শনাক্তকৃত রোগীদের সকলে ভাল আছে। সুতরাং এতে আতংকিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে বলে জানান, উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার মেরাজ হোসেন চয়ন। তিনি জানান, উখিয়া হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ৩ জন স্থানীয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে ১ জনের অবস্থা অগ্রগতি হওয়ায় তাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। অন্য ২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও উখিয়ার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ জন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্প থেকে সরাসরি কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের মধুরছড়া, বালুখালী ৯, ১১, ১০ এবং ১৭ নং ও জামতলী, তাজনিমার খোলা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বত্র ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ার খবরে রোহিঙ্গারা আতংকিত ও শঙ্কিত। ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে তাদের কোন পূর্ব ধারণা নেই। এ জন্যে তারা এই রোগ মোকাবেলা এবং প্রতিরোধে বিভিন্ন এনজিও, সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত এমএসএস এর গণসংযোগ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গা ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি, তবে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। রোহিঙ্গারা যে ঝুঁকিতে নেই, সেটি বলা যাবেনা, কারণ ক্যাম্পে পাহাড়ের নিচে অনেক গর্তে, নালায় জমাট বাধা পানিতেও এডিস মশার জন্ম নিতে পারে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা ভাল আছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট